এক মরদেহের দাবিদার দুই পরিবার!
মোংলায় একই মরদেহের দাবি তুলেছেন দুই পরিবার। মরদেহ উদ্ধারের পর তা শনাক্ত করে নিয়ে গেছে এক পরিবার। এরপর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মরদেহ নিজের বাবার বলে দাবি করেছেন সুমন রানা। তিনি মোংলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চিংড়ি বণিক সমিতির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহে আলমের ছোট ছেলে। আজ শনিবার (২৯ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন তিনি। এসময় মাহে আলমের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, পুলিশ বলছে—আগে একটি পরিবারের সদস্যরা মরদেহটি শনাক্ত করে নিয়ে যায়। এখন আরেকটি দাবি উঠেছে। তবে, মরদেহের ডিএনএ সংরক্ষিত আছে। শনাক্তের পরই সব বলা যাবে।
আজ বেলা সোয়া ১১টায় মোংলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুমন রানা জানান, গত ১০ এপ্রিল সকালে মামার ঘাটে ঘোরাঘুরি করছিলেন মাহে আলম। এসময় স্থানীয় মোশারেফ হোসেন নামের এক নৌকার মাঝি তার বাবার হাত ধরে বানীশান্তা ঘাটের দিকে নিয়ে যায়। এরপর মাহে আলমকে বানীশান্তা ঘাট থেকে অপহরণ করে সুন্দরবনের করমজলে নিয়ে যায় মোশারেফ মাঝিসহ অজ্ঞাতরা। যা মোংলা পোর্ট পৌরসভার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে পাওয়া গেছে।
সুমন রানা অভিযোগ করেন, মাহে আলমকে অপহরণ করার তিন দিন পর ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজল এলাকা থেকে একটি অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে খুলনার দাকোপ থানা পুলিশ। ওই মরদেহের পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট মাহে আলমের বলে শনাক্ত ও দাবি করে তার পরিবার। কিন্তু এর আগে ৭ এপ্রিল বনবিভাগের অভিযানকালে মারধরে নদীতে পড়ে নিখোঁজ মোংলার চিলা এলাকার জেলে হিলটন নাথের পরনে ছিল লুঙ্গি ও গেঞ্জি। রহস্যজনকভাবে মাহে আলমের মরদেহটি হিলটনের বলে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দাকোপ থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ১০ এপ্রিলের ওই ঘটনার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ২০ এপ্রিল মোংলা পোর্ট পৌরসভা থেকে সংগ্রহের পর মাহে আলমকে অপহরণ ও খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। সুন্দরবন থেকে উদ্ধার ওই মরদেহটি মাহে আলমের দাবি করে তার পরিবারের সদস্যরা মোংলা ও দাকোপ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তবে, এ ঘটনায় মোংলায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাহে আলমের বড় ছেলে সোহেল রানা, ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন, সরোয়ার হোসেন, জসিমউদ্দীন, পরিবারের সদস্য নুরআলম শেখ, জাহিদ হোসেন ও খায়রুল হোসেন।
খুলনার দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার দত্ত বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহটি হিলটনের বলে তার পিতা-মাতা শনাক্ত করে নিয়ে যান। পরে মাহে আলমের পরিবার মৃতদেহটি তাদের দাবি করে এখানে একটি জিডি করেছেন। তবে, মৃতদেহের ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে, পরীক্ষা করে জানা যাবে তা হিলটনের নাকি মাহে আলমের।’ ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ও বিকাশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘মৃতদেহটি দাকোপ থানার অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হয়েছে এবং দাকোপ থানায় হত্যা মামলাও হয়েছে। এ নিয়ে মামলার তদন্ত কাজও চলছে। একই ঘটনায় তো দুই থানায় মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ওই মৃতদেহটি হিলটনের বলে তার পরিবার নিয়েও গেছে। এদিকে, ওই একই মৃতদেহ মাহে আলমের বলে তার পরিবার দাবি করছে। এখন ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর শনাক্ত করা সম্ভব হবে মৃতদেহটি মুলত কার ছিল।’ শনাক্ত হলেই ওই মামলায় তা সম্পৃক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।