কলেজের নামে বাড়িভাড়া, ১৬ লাখ টাকা বকেয়ার অভিযোগ
রাজধানীর উত্তরায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেসিডেন্সিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ। যেখানে চলে শিক্ষা দেওয়ার কাজ, সেই কলেজের বিরুদ্ধেই এখন নানা অভিযোগ। অভিযোগ বলছে—চুক্তিতে নেওয়া ভবনের ভাড়া দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করা হচ্ছে না, ভাড়া চাইতে গেলে মারমুখী হয়ে উঠছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আজিজুর রহমান। এদিকে, শিক্ষা বোর্ডে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে এক ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য স্থানে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ।
জানা গেছে, ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু করেন আজিজুর রহমান। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের দুই তলা ভবনের ভাড়ার চুক্তিপত্রে তিনি ও বাড়ির মালিক মো. আকরাম হোসেন সই করেন।
বাড়ির মালিকের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী মাসিক বাড়িভাড়া বাবদ নির্ধারিত হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। কলেজের পরিচালক আজিজুর বাড়িটি ভাড়া নেন এক বছর ১০ মাস। এরই মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ টাকা বকেয়া করেন।
এ অভিযোগে কলেজের পরিচালক আজিজুরকে মালিকপক্ষ আইনি নোটশ পাঠান। বাড়ির মালিক আকরাম হোসেন ও আকতার হোসেনের পক্ষে আইনি নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট মোস্তফা কামাল মুরাদ। সেখানে বকেয়া বিল পরিশোধসহ বাড়ি ছাড়ার কথা বলা হয়।
এর আগে আকতার হোসেন রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় গত ১ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে আকতার হোসেন অভিযোগ করেন, বকেয়া টাকা চওয়ার কারণে আজিজুর তাঁকে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন এবং মারধরের চেষ্টা করেন।
সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে একটি অভিযোগ জানিয়েছেন ভবনমালিক আকতার। সেখানে তিনি বাড়িভাড়ার বকেয়া টাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আজিজুর রহমান আইন না মেনে এক অস্থায়ী ঠিকানায় রেজিস্ট্রিকৃত কলেজ অন্য ঠিকানায় পরিচালনা করছেন।
যদিও কলেজটির প্রতিষ্ঠতা পরিচালক আজিজুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি, ১৬ লাখ টাকা বকেয়া নেই বলে দাবি করেছেন। তবে, কত টাকা বকেয়া রয়েছে তা নির্দ্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
বাড়ির মালিক আকতার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজিজুর রহমান প্রথম থেকেই আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে আসছেন। তিনি বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া দিতে বিলম্ব করেন। ফোনে ভাড়া চাইতে গেলে একাধিকবার আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাইয়ে সব বকেয়া ভাড়া দিয়ে দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তারই অনুরোধে আমরা তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিই। এখনও টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। নতুন করে সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জানুয়ারির কথা বলছেন, যা তার পূর্ব প্রতারণার স্টাইল।’
আকতার আরও বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষকের কাছে বর্তমানে ১৬ লাখ টাকা ভাড়া পাই। এদিকে, আমাদের সংসারে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাহায্য কামনা করছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজের পরিচালক আজিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। আমরা প্রথমে খিলক্ষেতে ছিলাম। গত বছর আমরা ওই ভবনে শিফট করেছি। এখানে আসার পর কোনো সেশন এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সবাই কনসিডার করেছেন। তবে, আমি কিন্তু কোনো কনসিডারেশন চাইনি। আমি শুধু বলেছি, আমার একটা সেশন আসুক, যে টাকা বকেয়া রয়েছে, কিস্তির মাধ্যমে আস্তে-ধীরে দিয়ে দেব। তারপরও তিনি একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।’
কলেজের পরিচালক আরও বলেন, ‘আমি চিন্তা করছি, আকতার সাহেবের বড় ভাই, যার সঙ্গে আমার বাড়ি ভাড়ার চুক্তি হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে চলতি অথবা আগামী মাসের শুরুতে আমরা বসব। সে সময় কীভাবে কী করব, তাঁকে জানাব। আমরা আমাদের জায়গায় অনেস্ট।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাড়ি ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে তাঁরা একটি বাড়িতে ডেভেলপার পাঠিয়েছিলেন। বিষয়টি দেখার পর আমি আকরাম ভাইকে (ভাবনমালিক) জানিয়েছি। তাঁকে বলেছি, এগ্রিমেন্টের মেয়াদ এখনও অনেকদিন রয়েছে, আপনারা এখন ডেভেলপার পাঠাতে পারেন না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আপনারা যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। তখন আমি কিছু বলব না।’
আজিজুর আরও বলেন, ‘ভবনের মালিকরা বলছেন, ১৬ লাখ টাকা বকেয়া। এটা ঠিক না। ১৬ লাখ টাকা বকেয়া নেই। আমরা আইএফআইসি ব্যাংকে আকরাম সাহেবের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে দুটি করে ইনস্টলমেন্টে ৪০ হাজার করে জমা দিচ্ছি। এটা উনার কাছেও হিসাব আছে, আমাদের কাছেও আছে। তবে, তারা আমাদের কাছে কত টাকা পায়, তা নির্দিষ্ট করে এখনি বলতে পারছি না। হিসাব বিভাগে কথা বলে জানানো যাবে। আর ক্যাশ কিছু দিয়েছি, সেটারও প্রমাণপত্র আমাদের কাছে আছে।’
তাহলে এতো টাকা বাকি হলো কীভাব—এমন প্রশ্নে আজিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো মাসে ৮০ হাজার দিতে পারিনি, ৫০ হাজার দিয়েছি। কোনো মাসে ৪০ হাজার দিয়েছি। আবার কোনো মাসে পুরো ভাড়া, অর্থাৎ, এক লাখ ৪০ হাজার টাকাও দিয়েছি। আর দুই তিন মাস মিস গেছে, এমন।’
আজিজুর আরও বলেন, ‘তারা (ভবনমালিক) শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগ দিয়ে যে প্রতারণার কথা বলছেন, তা ভিত্তিহীন।’