'কোর্টে আর আমু না, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম'
ভাটারায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা আক্তার হত্যা মামলার সাত বছরে শুরু হয়নি বিচার। বিচারের আশায় প্রতি তারিখে আদালতে হাজির হন তাঁর বাবা মো. ফারুক হোসেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনে বিচার শুরু না হওয়ায় ও আইনি মারপ্যাঁচে তারিখ পেছানোর ফলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন মো. ফারুক হোসেন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ছিল। নিহত শিশুটির বাবার মো. ফারুক হোসেন আদালতে আজ সাক্ষ্য দিতে আসেন। কিন্তু সাক্ষ্য দিতে এসে বিচারক দেখতে পান মামলার অভিযোগ গঠনই হয়নি। পরে তিনি রাষ্ট্রপক্ষকে এই মামলার অভিযোগ গঠন এতদিনে কেনো হয়নি বলে জানতে চান।
আজ নিহতের বাবা মো. ফারুক হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সাত বছর ধরে এই মামলার পিছনে ঘুরছি, শুধু ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু আসামিপক্ষ বিভিন্নভাবে তারিখ পেছায়। এই মামলার রায় আদৌ পাব কিনা, আমি সন্ধিহান। আমি আর কোর্টে আসব না, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। ফারুক হোসেন আরও বলেন, মেয়ের কথা প্রতি দিনই মনে পরে। আমার মেয়েকে আমি ন্যায়বিচার দিতে পারলাম না। মোবাইলে মেয়ের ছবি দেখলেই, বুক ফেটে কান্না আসে। আমি এক অপদার্থ বাবা !
শিশু ফারজানা ভাটারায় সোল মাইট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাটারা থানার ১ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িতে থাকত ফারজানা। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার ডুমুসিয়ায়।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় দিকে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে সুজনটেক এলাকার জলাশয় থেকে একটি বস্তা উদ্ধার করা হয়। ওই বস্তার ভেতরে শিশু ফারজানার লাশ ছিল। বস্তাটির মুখ বাঁধা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, ফারজানাকে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা তার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করে জলাশয়ে ফেলে দেয়। পরে লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ফারজানার বাবা মো. ফারুক হোসেন বাদী হয়ে ভাটারা থানায় ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পরে পুলিশ মাহাবুব হাসান, আ. ছালাম, সোহেল রানা ও সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী ফারহানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলা দায়ের করার পরে সিআইডি, পুলিশসহ তিনটি সংস্থা এই মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে নারী ও শিশু আদালতের বিচারক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে ২০১৯ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় মামলা আমলে গ্রহণ করেন। সেই থেকে এই মামলায় এখনো অভিযোগ গঠন হয়নি।