গরিবের কসাইখানায় ১০ টাকায় গরুর মাংস
ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গরিবের কসাইখানা নামের ব্যতিক্রমী এই ঈদ বাজারের আয়োজন করা হয়। যেখানে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ঈদের দিন এমনি এক বাজারের দেখা মেলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায়।
গতকাল শনিবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্নআয়ের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার এক কেজি করে গরুর মাংস কিনে নেন। এমন আয়োজনে হাসি ফুটে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে। এর আগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করে সংগঠনটি।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার রাবিয়া খাতুন (৬৫)। ছেলে-সন্তান নেই। স্বামীকে হারিয়েছেন এক যুগ আগে। একটি ছোট ঘরে একাই বসবাস করেন তিনি। বাজার থেকে গরুর মাংস কেনা হয়নি। তাই জানেন না বাজারে কত টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি হয়। গরিবের কসাইখানা থেকে ১০ টাকায় গরুর মাংস কিনেছেন তিনি। গরুর মাংসের এতো কম দাম জেনে অনেকটাই অবাক হয়েছেন রাবিয়া।
রাবিয়া বলেন, ‘বাজার থেকে কখনও গরুর মাংস কিনি নাই। এখানে এসে ১০টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। রোজার ঈদে এই প্রথম দুই টুকরো গরুর মাংস দিয়ে ভাত খামু। একা মানুষ এক কেজি গরুর মাংস চারদিন খেতে পারমু।’
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের আকলিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘গতকাল থেকে বাজারে গরু জবাই করা হচ্ছে। দুই ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। তারা গরু জবাই দেখে এসে বলে, মা আমাদের গরুর গোস্ত কিনবা না? এমন প্রশ্নে খুব কষ্ট হইছিল। কিন্তু তাদের বলছিলাম ঈদের দিন গরুর গোস্ত কিনমু। ঠিকই আল্লাহ আমার সন্তানদের জন্য গরুর মাংসের ব্যবস্থা করে দিল। এখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। এ দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই। এখন বাসায় গিয়ে রানমু।’
কামারখাড়া এলাকার সেন্টু বেপারি (৪৮)। তিনি রিকশা চালান। তার দুই মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর সংসার। গতকাল সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৩৪০টাকা পেয়েছেন। এই টাকা দিয়ে সেমাই-চিনি কিনেছিলেন।
শনিবার সকালেও রিকশা নিয়ে বের হোন দুপুরে ভালোমন্দ খাবারের ব্যবস্থা করতে। পরে গরিবের কসাইখানায় এসে তিনিও ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখান থেকে দেখা যায়, বাজারে ৭৫০ টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি করতেছে। ওই কসাইখানার সামনে দিয়ে আসলাম কিন্তু কিনার সাহস পাই নাই। এখানে এসে দেখি গরুর মাংস ১০ টাকায় বিক্রি করতেছে। কিন্তু আমার কাছে তাদের থেকে কেনার জন্য টোকেন ছিল না। পরে তাদের বলার পর টোকেন দিল। আমি ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম।’
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘ঈদের দিন সাড়ে তিনশ পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এ ছোট আয়োজন। তবে, আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামীতে সবার সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারব।’
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে এত দামে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের মতো তারাও যেন এ দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এ রকম আয়োজন করতে আমরা আরও উৎসাহ পাই।’