গাজীপুরে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে দম্পতি গ্রেপ্তার
গাজীপুরের টঙ্গীতে ফারজানা আক্তার মিম (৯) নামের শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গীর মিলগেট এলাকা থেকে ওই দম্পতি দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শিশুটিকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া দিয়ে এবং অনাহারে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ আলম জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী মিলগেট এলাকায় আবু শাকেরের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থেকে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা (ট্রাক) পরিচালনা করতেন দেলোয়ার হোসেন। এ দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আনিসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার মিম (৯)। ওই দম্পতির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে থানায় মামলা করেন মিমের বাবা আনিসুর রহমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দেলোয়ার-জেসমিন দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি নির্যাতিত আহত শিশু মিমকে উদ্ধার করে।
ওসি আরও জানান, শিশু মিমের শরীরে নির্যাতনের বেশ কিছু চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতিত শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা শিশুটির ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাই। পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা এবং স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে প্রায় দেড় বছর আগে আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় সালাহ উদ্দিনের মাধ্যমে আমার দুই মেয়ের মধ্যে মিমকে দেলোয়ার-জেসমিন দম্পতির বাসায় কাজ করার জন্য দেই। বাসার কাজের পাশাপাশি ওই দম্পত্তি আমার মেয়ের ভরণপোষণ ও লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে লেখাপড়া না করিয়ে তাদের বাসার যাবতীয় সাংসারিক কাজ করাতেন। বিনিময়ে কোনো টাকাপয়সাও দেয়নি। কাজ করতে গিয়ে ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে ওই দম্পত্তি আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। আমার মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা কথা বলতে দিতেন না। ওই দম্পত্তির নির্যাতনে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় মিমকে ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঈদের পরদিন শনিবার আমার গ্রামের বাড়ির পাশে সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে রেখে চলে যায়। পরে শ্যালিকার মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি মেয়েকে আনতে যাই। এ সময় মিমের শরীরে বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পাই।’
শিশুটির বাবা আনিস আরও বলেন, ‘তারা আমার মেয়েকে মেরে মাথা ফাটিয়েছে, পাঁজরের ও হাতের হাড় এবং দাঁত ভেঙে দিয়েছে। এমনকি মেয়ের গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করেছে বলে মিম জানিয়েছে। নির্যাতনের কারণে মিমের কপালে সাতটি সেলাইয়ের চিহ্ন রয়েছে। ডান হাতে কব্জির উপরে হাড় ভেঙে যাওয়ায় একটু বেঁকে গেছে। তার ঘাড়, কোমর, পিঠ, বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের কারণে সৃষ্ট ছোপছোপ কালো দাগ ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। তারা আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও খাবার না দিয়ে অনাহারে রেখে কষ্ট দিতেন। আমি এ ঘটনার বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি চাই।’