গোপালগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৮৬৯ টন খাদ্য বেশি উৎপাদন
গোপালগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন খাদ্য (চালের হিসাবে) বেশি ফলিয়েছেন। এ জেলায় ইতোমধ্যে ৫ উপজেলার ৯৯ ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ৯৯% ধান কাটা শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এ জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে জেলার কৃষকরা খুশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জে ৮০ হাজার ৫৪৬ হেক্টরে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় (চালের হিসাবে) ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন। কৃষক প্রণোদনার বীজ, সার, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে ৮১ হাজার ২২৯ হেক্টরে ধানের আবাদ করেন। সেই হিসেবে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় (চালের হিসাবে) ৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমির ধান টাকা সম্পন্ন হয়েছে। এখান থেকে (চালের হিসাবে) ৩ লাখ ৯০ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে। ৯৯% ধান কাটা শেষে (চালের হিসাবে) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন খাদ্য বেশি উৎপাদিত হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। এখনো ৬০৬ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। এখান থেকে (চালের হিসাবে) আরও ২ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হবে। সব মিলিয়ে এ জেলায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭১ মেট্রিন টন খাদ্য উৎপাদিত হবে বলে ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন।
ধানের উৎপাদন চালের হিসেবে দেখানোর প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, মাথা প্রতি প্রতিদিন ১ জন মানুষের চালের চাহিদা ৩৪০ গ্রাম। সেই কারণে জাতীয়ভাবে আমাদের কাছে ধান উৎপাদনের হিসাব চাওয়া হয় না। চাল উৎপাদানের হিসেব চাওয়া হয়। তাই আমরা উৎপাদিত ধানকে চালে রূপান্তরিত করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠাই। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদনের সঠিক চিত্র সম্পর্কে সরকার অবগত হতে পারে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রেখে চাষাবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা কৃষকদের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করি। কৃষক আমাদের উদ্যোগকে গ্রহণ করে ধান চাষে মনোনিবেশ করেন। আমরা তাদের প্রণোদনার ধান বীজ, সার বিনামূল্যে প্রদান করি। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সব সময় তাদের পাশে ছিলাম। আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করেছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামী ১ বছরের খাদ্য নিয়ে আর কোনো দুঃচিন্তা নেই। উদ্বৃত্ত ফসল তারা বাজারে বিক্রি করেও ভালো দাম পাচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক হাবিব মুন্সি বলেন, ২ একর জমিতে ধান চাষ করার পর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। ধানে কুশি বের হওয়ার সময় আবহাওয়া প্রতিকূলে চলে যায়। ধানে নেক ব্যালাস্ট দেখা দেয়। এরপর হিটসকে আক্রান্ত হয় ধান। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তখন আমাদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে আমরা ধান রক্ষা করতে পেরেছি। সর্বোপরি আল্লাহর অশেষ রহমতে শেষ পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। ২ একরে ১৮৫ মন ধান পেয়েছি। ১০০ মণ ধান দিয়ে সারা বছর চলবে। বাদবাকি ৮৫ মণ ধান বাজারে বিক্রি করব। বাজারে ধানের দাম ভালো রয়েছে। ধানের ভালো দাম পেয়ে আমরা খুশি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, বোরো মৌসুমে ধান চাষ করার পর কৃষকরা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েন। আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। তারা আমাদের পরামর্শে কাজ করেছেন। তাই ধান নষ্ট হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তাদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ধান রোপণের সময় কোনো সমস্য হয়নি। পরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রসারণের পরামর্শে আমরা সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হই। অবশেষে ধানের বাম্পার ফলন পাই। কৃষি বিভাগ কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার দিয়ে আমাদের ধান কেটে দিয়েছে। তাই নিরাপদে ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। এ বছর ধান কাটা নিয়ে কোনো দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।