চিকিৎসকের সহকারীকে হত্যা, প্রেমিকা গ্রেপ্তার
নরসিংদীর পলাশে গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে চিকিৎসকের সহকারী মীর মাইনুল হককে (২৫) গলা কেটে হত্যা করেছেন তার প্রেমিকা। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন প্রেমিকা ইসরাত জাহান মিম। আজ রোবাবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছে পলাশ থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত ইসরাত জাহান মিম উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের খিলপাড়ার মেয়ে। গতকাল শনিবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে গতকাল বিকেলে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ঘোড়াশাল বাজারে টুথ ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার থেকে মাইনুলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মীর মাইনুল হক ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়ার মৃত আব্দুল ফেলু মীরের ছেলে। তিনি ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঘোড়াশালে টুথ ডেন্টালে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত মীমের তথ্যের বর্ণনা দিয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ সাংবাদিকদের জানান, মীম ও মাইনুল স্কুলজীবন থেকেই একে অপরের পরিচিত। দুজন স্থানীয় মুসা বিন হাকিম কলেজে একসঙ্গে পড়তেন। এক সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছরের মাঝামাঝিতে মিম আরেক ছেলেকে বিয়ে করলেও সংসার টেকেনি। ফলে পুরোনো প্রেমিক মাইনুলের সঙ্গে ফের সম্পর্কে জড়ান।
কিন্তু এরই মধ্যে শ্রাবন্তী নামে আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মাইনুল। গোপনে একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালাতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস করতে থাকেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মাইনুল। গতকাল বিকেলে ডেন্টাল চিকিৎসক শিহাবুল হক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালা খোলার পর অভ্যর্থনা কক্ষে মাইনুলের মরদেহ গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এর পরই রাতে সন্দেহভাজন মিমকে বাসা থেকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে মিম মাইনুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মিম পুলিশকে জানান, মাইনুলের বিয়ে করার কথা জানতে পেরেই চেতনানাশক ইনজেকশন কিনেন তিনি। কৌশলে মাইনুলকে তার কর্মস্থলে ডেকে নেন। একপর্যায়ে মাইনুলের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করলে মাইনুল অচেতন হয়ে যান। এরপর ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে মাইনুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় তিনি।
মিমের বর্ণনা অনুযায়ী, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করায় চেতনানাশক ইনজেকশন এবং তা দ্রুত পুশ করার ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা ছিল। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে হত্যা মিশন শেষ করেন। এরপর ছুরি, মোবাইল ফোন ও সিরিঞ্জ ঘোড়াশাল এলাকার নিকটবর্তী শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ আরও জানান, এ ঘটনায় নিহত মাইনুলের বড় ভাই সাইদুর মীর বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় ইসরাত জাহান মিমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।