জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় সেই খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল জামুকার ৭২তম সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সভায় জামুকার সদস্য ও সংসদ সদস্য শাহজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন শাহজাহান খান। পরে জামুকার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীসহ অন্যরা এই বক্তব্যে একমত পোষণ করেন।
আজ শনিবার গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এর উত্তর দেন।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘খবরটা অনেকেই হয়তো ঠিকমতো পরিবেশন করেন নাই। বঙ্গবন্ধুর চার হত্যাকারীর বিরুদ্ধে আদালতে রায় ঘোষিত হয়েছে। তাদের রাষ্ট্রীয় সনদ বা সম্মাননা সেটা বাতিল করা হয়েছে। আরো চারজনের নাম এসেছে দালিলিক প্রমাণসহ। যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষী রয়েছেন। সেজন্য আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি, আগামী সভায় এ বিষয়ে কী কী দালিলিক প্রমাণ আছে সেটা দাখিল করার জন্য। এবং তাহলে তাদের সম্মাননা বাতিল করা হবে।’
মন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, ‘এটার নজির শুধু বাংলাদেশে নয়, এটা রাজনৈতিক কারণেও নয়। পৃথিবীতে এমন বহু নজির আছে যে, তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের সম্মানসূচক পদক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সেজন্যই (সভায়) তাদের নাম নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের কার কী ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কী- সেটা দালিলিক প্রমাণসহ পরবর্তীতে সভায় উপস্থাপিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল আলোচনা হয়েছে। আমরা একটা উপকমিটি করে দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে তারা এসব দলিল উপস্থাপন করবে।’
‘যেমন- প্রমাণস্বরূপ যেসব কথা উত্থাপিত হয়েছিল যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চলে যাওয়াতে তিনি (জিয়াউর রহমান) সহায়তা করেছিলেন। উচ্চপদে পদায়ন করেছিলেন জিয়াউর রহমান সাহেব বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের। তারপর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়েছেন। এবং তিনি যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন, সেখানে শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুল আলিম এসব স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। সংবিধান বাতিল করেছিলেন। সেসব কারণে’, যোগ করেন মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আলোচনা আসছে, তাঁরা তো শাস্তি পায় নাই। জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক তাঁরা (শাস্তি) পায় নাই। দেশের আইন, সমস্ত দুনিয়াতেই আছে, যখন একজন লোক মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো রায় ঘোষিত হয় না। কেউ যদি আসামি থাকেন তাহলে তাঁকে বাদ দিয়ে আদালত অন্যদের বিরুদ্ধে রায় দেন। সেই হিসেবে তাদের রায় বাদ পড়েছে। তাদের সম্বন্ধে আদালত কোনো কথা বলেনি।’
‘কিন্তু কী কী দালিলিক প্রমাণ আছে, মুখে বললে তো হবে না। দালিলিক প্রমাণ যদি থেকে থাকে সেগুলো আগামী সভায় উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে’, যোগ করেন মন্ত্রী।