জুতার ফিতা দিয়ে গলা পেঁচানোর সময় ছেলে বলে, ‘বাবা তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে?’
ছেলে ফারহান উদ্দিন বিপ্লব অন্য রুমে ঘুমাচ্ছিল। রাকিব জুতার ফিতা দিয়ে ছেলের গলা পেঁচানোর সময় ছেলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। অনেক হাউমাউ করে কাঁদে। ছেলেটি বলে, ‘বাবা, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে?’ তারপর জোর করে ছেলেটির গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরে। ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যায় ছেলেটি। ভয়ঙ্কর কিলার রাজধানীর দক্ষিণখানে দুই শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে লোমহর্ষকভাবে হত্যার অভিযোগে চার্জশীটে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দিন আহম্মেদ লিটনের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার (৩১জানুয়ারি) রায় ঘোষণা করবেন আদালত। ঢাকা মহানগর ৭ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক তেহসিন ইফতেখার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ২২ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন বিশ্ব ইজতেমা থাকায় আসামিকে হাজির করা সম্ভব হয়নি। পরে আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।
নিহত মুন্নীর ভাই এবং মামলার বাদি মুন্না আহমেদ বলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি মামলাটির রায়ের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু, বিশ্ব ইজতেমার কারণে আসামিকে হাজির করা হয়নি। ৩১ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ধার্য রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নির হত্যাকারীর ফাঁসি হোক। এখন দেখা যাক, আদালত কী করে। যদিও মামলা শেষ হতে সময়টা বেশি লেগেছে। লম্বা সময় নিয়েছে তদন্তে। তারপরও শেষ পর্যন্ত রায় আসছে।’
মুন্না আহমেদ বলেন, ‘রায়ে সন্তুষ্ট না হলেও আমার আর কিছু করার নেই। করোনার পর থেকে বেকার আছি। মামলা চালাতে গিয়ে আমার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তিনজনের লাশ মর্গ থেকে আনতেই ডোমকে দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে লাশ নিয়ে আসি। এখনো বেকার আছি। টাকা খরচ করার সামর্থ্য আমার নেই। কাজেই আমার আর কিছু করার থাকবে না।’
খুনের বিষয়ে মুন্না বলেন, ‘আদালতে রাকিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বলেছে, সে নাকি ঋণগ্রস্ত। পাওনাদাররা তাকে মামলার হুমকি দিয়ে আসছিল। তখন সে চিন্তা করে, হাজতে গেলে স্ত্রী-সন্তানদের কী হবে? এ কারণে ওদের হত্যা করে। বলেছে, সেও নাকি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তার ভেতর সে রকমের কোনো লক্ষণ দেখিনি। প্রথমে সে মুন্নীর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরে গলা টিপে হত্যা করে। টিভি দেখার সময় রশি দিয়ে লাইবার গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করে। ছেলে ফারহান উদ্দিন বিপ্লব তার অন্য রুমে ঘুমাচ্ছিল। রাকিব জুতার ফিতা দিয়ে ছেলের গলা পেঁচানোর সময় ছেলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। অনেক হাউমাউ করে কাঁদে। ছেলেটি বলে, ‘বাবা, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে?’ তারপর জোর করে ছেলেটির গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরে। রাকিব ভয়ঙ্কর কিলার। কিভাবে সে একে একে তিনটা তাজা প্রাণ কেড়ে নিলো।’
রাকিবের ঋণগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্না আহম্মেদ বলেন, ‘রাকিবের কয়েকজন বন্ধু বলেছে, সে অনলাইনে জুয়া খেলত। এভাবে সে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়। শেষ মুহূর্তে আমাদের কাছে টাকা চেয়েছিল। কিন্তু, এত টাকা পাব কোথায়? আমরা বলেছিলাম, তোমার চাকরি প্রায় শেষের দিকে। পেনশনের ৫০ লাখ টাকা পাবে। ওই টাকা দিয়ে কিছুটা ঋণ শোধ করবে। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছ, তাদের বুঝিয়ে বলবে। সময় নিয়ে আস্তে আস্তে দিয়ে দেবে। আমাদের ধারণা—টাকা না পেয়ে হয়ত এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
বোনকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন মুন্না আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘তিন বোনের মধ্যে ও (মুন্নী) ছিল সবার ছোট। বড় বোনদের জন্য আমার কিছু করতে হয়নি। কিন্তু, ও তো ছোট ছিল। ওকে স্কুল-কলেজে নিয়ে যাওয়া। ছোট-খাট আবদার মেটানো। অনেক সময় সাধ্যের বাইরে গিয়েও চেষ্টা করেছি আবদার মেটানোর। সেই বোনকে, ভাগ্নে-ভাগ্নিকে কি নির্মমভাবে খুন করেছে। রাকিবের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। ওর যেন ফাঁসি হয়।’