জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে : টিআইবি
জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, বলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে না, বরং নারীর আরও পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কৌশল প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর সম-অধিকারভিত্তিক সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা নিরূপণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানান।
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার উপজাত হিসেবে অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিকভাবে নারী অধিকার সুরক্ষার অন্যতম প্রতিবন্ধক দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোরারোপ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, করোনাকালে ও তার পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ মূলত নারীর স্ব-উদ্যোগেই আশাব্যঞ্জক হারে বেড়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। শত প্রতিকূলতা জয় করে প্রশংসনীয়ভাবে অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি—ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন শ্রমশক্তিতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে, বাংলাদেশের অনলাইন শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ২০১৪ সালে মাত্র ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও, প্রত্যাশিত মানের সমতা অর্জনে এখনও নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নারীর অংশগ্রহণে লৈঙ্গিক বৈষম্য এখনও প্রকট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ ২০২২ থেকে আমরা দেখছি দেশে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কৌশল প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর সম-অধিকারভিত্তিক সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ পথরেখা নিরূপণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলা অনলাইন সহিংসতাকে আতঙ্কজনক উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘অনলাইনে অশ্লীল, যৌন হয়রানিমূলক বার্তা ও ছবি পাঠানো, ভুয়া আইডি তৈরির মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামনে আসছে। নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে আমরা দেখছি, অনলাইনে প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। অনলাইন সহিংসতার ফলে মানসিক আঘাত, হতাশা, উদ্বেগ, ট্রমার শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারীকে অনলাইন সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে না পারলে নারী ক্ষমতায়ন বা সমতা অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না।’