জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে চীনফেরত আরেক যুবক রংপুর মেডিকেলে ভর্তি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চীনফেরত আরো এক যুবককে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এ নিয়ে দুজন রমেকের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হলেন।
চীনফেরত ওই যুবকের নাম আলামিন। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের রেজাউল ইসলামের ছেলে।
গতকাল রোববার চীন থেকে দেশে ফেরেন আলামিন। পরে বিকেলে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর দেখা দিলে সন্ধ্যায় তাঁকে রমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করান। তবে আলামিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ সোমবার ঢাকায় আলামিনের রক্ত ও কফ পাঠানো হবে এবং ঢাকার রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না।
আইসোলেশন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ুন কবির জানান, আলামিন চীনের ইয়াংহু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। রোববার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই রাত ১০টায় তাঁর নিজ বাড়ি কালীগঞ্জে আসেন তিনি। কিন্তু বাসায় আসার পর তাঁর বমি এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে দ্রুত রংপুর মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ফেরা তাজবিদ হোসেন (২৫) নামের আরো এক যুবক জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত শনিবার রমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনিও হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রয়েছেন।
অসুস্থ তাজবিদ হোসেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তাজবিদ চীনের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। গত ২৯ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন এবং বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাড়ি আসেন। শনিবার সকালে তাঁর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলে পরিবারের লোকজন তাঁকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে তাজবিদ রমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘তাজবিদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা এখনো নিশ্চিত নই। এখানে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাঁর রক্তসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’ তবে ঢাকা থেকে এখনো তাজবীদের রিপোর্ট আসেনি বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সিঙ্গাপুরে নতুন করে তিনজন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি দুজন সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৩ জনে। গতকাল রোববার রাতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ খবর জানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নাগরিক সম্প্রতি চীন সফর করেননি। সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থাতেই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিসেসের (এনসিআইড) একটি কক্ষে আলাদা করে রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০৮ জনে। এ ছাড়া আজ সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৭১ বলে জানা গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
চীনে নতুন এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিকও। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের।