টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্রী হত্যায় আটক ‘প্রেমিক’ মনিরের মৃত্যু
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার হত্যার ঘটনায় আটককৃত মনিরের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাতাপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করে র্যাব।
বিষয়টি আজ দুপুরে র্যাব-১২-এর টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আবদুল্লাহ আল মানুম নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানান, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নিহত সুমাইয়া আক্তার এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ও উপজেলার পালিমা গ্রামের ফেরদৌসের মেয়ে। মনির উপজেলার মশাজান গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। গতকাল বুধবার সকালে সাড়ে ৬টার দিকে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে খুন হয় সুমাইয়া।
র্যাব কমান্ডার জানান, গতকাল দিনভর গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং হত্যার আগের নানা ঘটনা পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মনির জড়িত। পুলিশের কাছে জব্দকৃত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি মনিরের। এই ছুরি হাতেই নানা কসরত করা অবস্থার বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে সুমাইয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মনিরের বিভিন্ন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রেম সংক্রান্ত বিষয় ও সম্প্রতি সম্পর্ক না থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সুমাইয়া ও মনির পূর্ব পরিচিত। বিভিন্ন সময় মনির সুমাইয়ার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। এতে সাড়া না পেয়ে বল প্রয়োগ ও মানসিক চাপে রাখতেন মনির। এ থেকেই তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে কয়েক মাস আগে সুমাইয়া মনিরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এতে মনিরের সন্দেহ হয় সুমাইয়া অন্য কারোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। এজন্য ঘটনার পাঁচ দিন আগে সুমাইয়াকে কানে আঘাত করে আহত করে মনির। এবং তা ভিডিও করে বন্ধুদের দেখায়। এরপরেও সুমাইয়া তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সেই থেকে ক্ষুব্ধ হন মনির। পরিকল্পনা করে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার। এ বিষয়টিও বিভিন্ন সময় মাদক গ্রহণ শেষে তার বন্ধুদের কাছে জানান। এ হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে মনির প্রচুর মাদক সেবন করেন। নানা তথ্য উপাত্ত ও ভিডিও ফুটেজ থেকে তা নিশ্চিত হওয়ার দাবিও করেছেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে সুমাইয়াকে হত্যা করে সেও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিকভাবে আঘাতের চিহ্ন বা ধরন দেখে মনে হয়েছিল তৃতীয় কোনও পক্ষ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। পরে হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত ছুরিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তা একটি গিয়ার ছুরি। যেটির সুইচ চাপলে বাটের দুই দিকেই সমান অংশ বের হয়। তাই পেটে ছুরি চালাতে গিয়ে ছুরির অপর অংশ ঘাড়ে আঘাত লাগতে পারে।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এলেঙ্গা পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার খোকনের নির্মাণাধীন বাড়ির নীচতলার সিঁড়িকোঠা থেকে সুমাইয়ার মরদেহ ও আহত অবস্থায় মনিরকে উদ্ধার করা হয়।