নরসিংদীতে নির্বাচনি সহিংসতায় নিহতের ঘটনায় দুই মামলা
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় চান্দেরকান্দি ও উত্তর বাখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি সহিংসতায় দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে চান্দেরকান্দিতে আরিফ মিয়া (২৪) ও উত্তর বাখরনগরে ফরিদ মিয়া (৩২) নিহত হন।
পরে রায়পুরা থানায় চান্দেরকান্দির ঘটনায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দেরকান্দি পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া উত্তর বাখরনগরের ঘটনায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবদুল কাদের সরকার বাদী হয়ে নয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
চান্দেরকান্দিতে নিহত আরিফ মিয়া নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের জানখারটেক এলাকার চান মিয়ার ছেলে। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আরিফ নির্বাচনের কাজে পুলিশের সঙ্গে ওই ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন।
অন্যদিকে, উত্তর বাখরনগরে নিহত ফরিদ মিয়া উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের মুজিব মিয়ার ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চান্দেরকান্দি ও উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের দুটি ভোটকেন্দ্রে সদস্য পদপ্রার্থীরা ভোট গণনা শেষে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ব্যালট বাক্স রক্ষাসহ জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় হামলাকারীরা টেঁটা, বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। চান্দেরকান্দিতে হামলাকারীদের ছোড়া ইটপাটকেল ও গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান ও পুলিশ বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আরিফ গুরুতর আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আবদুল হান্নান (৪৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশ।
এ ছাড়া উত্তর বাখরনগরে ভোট গণনা শেষে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী পণ্ডিত মিয়া ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং ব্যালট বাক্স রক্ষাসহ জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষে ফরিদ মিয়া নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাতে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী বলেন, ‘ওই দুই কেন্দ্রে ব্যালট ভোট গণনার সময় ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল দুপক্ষের সমর্থকেরা। ব্যালট বাক্স রক্ষা ও জানের নিরাপত্তায় পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় আরিফ মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এসব ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। দুই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।