নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের রায় দ্রুত নিস্পত্তি করে তা কার্যকরের দাবিতে আদালত চত্বরে জেলা আইনজীবী সমিতি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেছে। চাঞ্চল্যকর এই সাত খুনের ৯ বছর পূর্তিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সাত খুনের এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায় হয়েছে। এরপর, আসামিরা আপিল করলে হাইকোর্ট ডিভিশনে র্যাবের সাবেক অধিনায়ক তারেক সাইদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এমএম রানা ও নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১১ জনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রয়েছে। বাকি ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। রায়ের ধীরগতির কারণে এখনও নিহতের পরিবারের সদস্যরা ভয় ও আতঙ্কে আছেন। নিম্ন-আদালতের রায় উচ্চআদালতে বহাল রেখে অবিলম্বে তা কার্যকর করার দাবি জানান নিহতদের পরিবারসহ আইনজীবীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপথগামী কতিপয় সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত মানুষগুলোর পরিবার তাদের আত্মার শান্তি কামনায় আজ সকালে চোখের জলে কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে এক মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনা থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন ফতুল্লা থানায়। পরে আদালত আসামিদের স্বীকারোক্তি, জবানবন্দি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৩৩ মাস পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় প্রদান করেন। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাত জনকে ১০ বছর করে এবং ২ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুনের অন্যতম আসামি সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এমএম রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। আর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
উচ্চআদালতে ধীরগতির কারণে এখনো নিহতের পরিবারের সদস্যরা ভয় ও আতঙ্কে আছেন বলে জানান মামলার বাদী ও নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি, নিহত নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম, নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের ও তাজুল ইসলামের ছোট ভাই মোহাম্মদ রাজু আহমেদ। তারা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ৭ জন নিহতের পরিবারের মধ্যে পাঁচটি পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে এমন প্রত্যাশা করে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, ‘সাত খুন নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ড হওয়ার পর আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। রাষ্ট্রের কাছে দাবি, এই মামলাটির দ্রুত শুনানি এবং নিষ্পত্তি করে দ্রুত কার্যকর করা হোক। কারণ সাত খুন আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ড কার্যকরের জন্য তাকিয়ে আছে সারা দেশ। এটা কার্যকর হলে দৃষ্টান্ত ও যুগান্তকারী রায় হয়ে থাকবে।’