নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ আওয়ামী লীগের
বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে, অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের নেতারা দল দুটিকে রাজপথে মোকাবিলার অঙ্গীকার করেছেন। এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
শনিবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন প্রাঙ্গণে বিজয় শোভাযাত্রার সময় দলীয় কর্মীদের এ নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। একাত্তরের খুনি, পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খুনিদের আমরা পরাজিত করব। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে। খেলা হবে, খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মানুষ অন্নের নিশ্চয়তা পেয়েছে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা পেয়েছে। তারা বাসস্থান পেয়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে উল্লেখ করে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই, আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট না দেয়, আমরা সালাম দিয়ে চলে যাব। আজকে আমরা শপথ নিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ, তোমাদের শিকড় আমরা উপড়ে ফেলব।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘আজ বিএনপি-জামায়াত ভেংচি মারে। আওয়ামী লীগ কোনো বানরের ভেংচিতে ভয় পায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ এদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, অভিযোগ করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশক পাকিস্তান বানানোর দুঃস্বপ্ন দেখে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে সন্ত্রাস, রাজাকার ও জঙ্গিবাদমুক্ত করব।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আজকে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে এই সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে প্রতিহত করতে হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরা দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। আজকে বিজয়ের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে, এদেরকে আমরা বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করব।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ওই পরাজিত শক্তি নতুনভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই বিজয়ের মাস থেকেই আমরা ঘোষণা দিতে চাই, পাকিস্তানিদের দোসর বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করতে হবে।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আজকের এই বিজয় র্যালি থেকে আমাদের প্রত্যয় হোক—যেকোনো মূল্যে এই অপশক্তিকে আমরা নির্মূল করব। এই দেশকে নিয়ে, আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যায় না।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা বলেছিল, ১০ তারিখে নাকি সরকারকে বিদায় নিতে হবে। ১০ তারিখে বিএনপিই পরাজিত হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে যে জাতীয় নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের ফয়সালা ১০ ডিসেম্বর হয়ে গেছে। ১০ তারিখ তারা পরাজয় মেনে নিয়েছে।’
বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে যুগ্ম সাধারণ মানুষ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘তাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ কখনো নিরাপদ নয়। তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদেরকে প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।’
দুপুরের পর থেকেই নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সমবেত হতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ে আগেই মৎস্য ভবন, কাকরাইল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। শোভাযাত্রাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
জাতীয় পতাকা, রং-বেরংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় আসেন নেতাকর্মীরা।