পদ্মা রেল সেতুর ৯৯ ভাগ কাজ শেষ
উপরে সড়ক সেতুর পর এবার স্বপ্নের পদ্মা রেল সেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেল লাইন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৯৯ ভাগ কাজ। বাকি আছে মাত্র আর একটি স্লিপার বসানোর কাজ। সাত মিটার দৈর্ঘ্যের স্লিপারটি বসালেই সম্পন্ন হবে রেলসেতু নির্মাণ। স্লিপারটি বসানোর হয়ে গেলে আগামী ৩০ মার্চ মাওয়া থেকে জাজিরা পুরো সেতুতে পরীক্ষামূলক রেল চলাচলেরও পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, বাকি থাকা স্লিপারটি চীন থেকে উড়োজাহাজে করে আনা হচ্ছে বাংলাদেশে। আজ সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় স্লিপারটি রাজধানী ঢাকার শাহ-জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। দ্রুতই সেটি প্রকল্পের সাইটে এসে পৌঁছাবে।
নির্ভরশীল এক প্রকৌশলী জানান, শুধু একটি স্লিপার মিস ম্যাচের জন্য দেরি হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে স্লিপারটি ফ্লাইটে আসার কথা। স্লিপারটি ২৫ তারিখে আসার কথা ছিল। রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩০ তারিখ সম্ভাব্য ট্রেন চলার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি কাজ শেষ হয়ে যায়। এটা নির্ভর করবে স্লিপারটি আসার উপর। আশা করি, সেটি পৌঁছে যাবে। স্লিপারটি বসানোর সঙ্গে ৬ মিটারের কংক্রিটিং হবে। সেটি শক্ত হতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। তা না হলে সেটি উপর দিয়ে ট্রেন যেতে পারবে না।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ বিকেলে জানান, স্লিপারটি বাংলাদেশে পৌঁছেছে। প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই ১২ ঘণ্টার মধ্যে বসানো হবে। তার পরই কংক্রিটের কাজ করা হবে। স্লিপারটির জন্যই এখন অপেক্ষা। আমাদের ৯৯ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সেতুতে এমন আটটি মুভমেন্ট জয়েন্ট রয়েছে। বাকি সাতটি যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের ওই ইস্পাতের স্লিপারটি বসানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। আর মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের আটটি স্লিপার ছাড়া বাকি সব কংক্রিটের তৈরি। এগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গায় রেলস্টেশনের পাশে স্থাপিত কারখানায় তৈরি করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির জন্য সব স্লিপার একই কারখানায় তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের স্লিপারগুলো তৈরি করে আনা হয় চীন থেকে।
প্রসঙ্গত, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে।
অন্যদিকে, পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ।