পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলার জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার হয়েছে : সিআইডি
পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলার জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলা যাবে না। এতে বোঝা যায়, হাত দিয়ে নাট-বল্টু খোলা হয়নি। নাট-বল্টু খোলার জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।’
রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির কার্যালয়ে আজ সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিআইডি এই কর্মকর্তা।
এর আগে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলার অভিযোগে গতকাল রোববার বায়েজিদ তালহা নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বায়েজিদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান রেজাউল মাসুদ।
সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘বায়জিদ তালহার একটি টিকটক আইডি রয়েছে এবং তার আরেক বন্ধু কায়সারের টিকটক আইডি থেকে গতকাল রোববার ৩০-৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড হয়েছে। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে বায়জিদকে শনাক্তের পর অবস্থান নিশ্চিত করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘রোববার সকাল ৭টা থেকে ১০টা-১১টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। বায়জিদ ও কায়সার দুই বন্ধু মিলে কারে (গাড়ি) করে সেখানে যান। বায়জিদ ড্রাইভ করছিলেন। পরে জাজিরা প্রান্তের ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যে নেমে নাট-বল্টু খুলে ফেলেন, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, ব্যঙ্গ করে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেন। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এটা স্যাবোটাজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমরা তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করেছি। সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে।’
কীভাবে নাট-বল্টু খোলা হয়েছে জানতে চাইলে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তাঁর কাছ থেকে ডিভাইস উদ্ধার করেছি। তাঁর আরও কিছু ডিভাইস, ভিডিও, আগের অ্যাক্টিভিটি দেখে মনে হয়েছে, এটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ।’
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ কাজটা করার ক্ষেত্রে তাঁর (বায়জিদ) যে গিল্টি মাইন্ড, আমরা মনে করছি, এ জিনিসটা এভাবে খোলার কথা না। এত বড় স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলার কথা নয়। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখেছি ইজিলি খুলে যাচ্ছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কী জানা গেছে—জানতে চাইলে রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি, এ কাজটা সেই করেছেন। তাঁর একটা প্ল্যান ছিল। বাকিটা তদন্তে আসবে। তাঁর আগের অ্যাক্টিভিটি সব আমরা দেখছি। আপনারা যে ভিডিও দেখেছেন, তার বাইরেও কিছু ভিডিও আমরা পেয়েছি।’
রেজাউল আরও বলেন, ‘এ নাট হাত দিয়ে কোনোভাবে খোলার কথা নয়। কোনোভাবে সম্ভব নয়। ধরেই নিতে হবে, এ কাজটা তাঁরা করেছেন, তাঁদের সহযোগী আছে, তাঁদের প্ল্যান আছে। মুহূর্তের মধ্যে আমরা বলতে পারব না।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনটা বিষয় এ ক্ষেত্রে ঘটেছে। মানুষের ফিলিংস, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এ তিনটির মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কাজটা হয়েছে। এখানে তাঁর গিল্টি মাইন্ড আছে। যে কারণে আমরা মামলা দিয়েছি।’
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘একটা অপরাধ করার পর যে কাজগুলো হয়, সেটা তিনি করেছেন। এ কাজটা করলাম, পোস্ট ডিলিট করলাম, আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করলাম, টিকটক... এগুলো দেখে বোঝা যায় গিল্টি মাইন্ড।’
বায়জিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না জানতে চাইলে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু, আমরা তাঁর অপরাধটাকেই গুরুত্বসহ দেখছি।’
এর আগে গত রোববার বিকেলে বায়জিদ তালহাকে আটক করে সিআইডি। ৩৪ সেকেন্ডের ভাইরাল টিকটক ভিডিওতে দেখা যায়, বায়জিদ তালহা সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। ভিডিও ধারণকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহ।’
নাট হাতে নিয়ে বায়েজিদ বলেন, ‘এ হলো পদ্মা সেতু, আমাদের... পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এ নাট খুইলা অ্যাহন আমার হাতে।’