পূর্বাচলে ইকরিমিকরির উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ
রাজধানীর পূর্বাচল ১১ নম্বর সেক্টরের জয়বাংলা চত্বরে ইকরিমিকরির উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। আজ শনিবার জয়বাংলা চত্বরের চারপাশে শিল্পী, শিশু-কিশোর এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষের বর্ণমালা আর আলপনা আঁকার মধ্য দিয়ে এই শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। উল্লেখ্য, পূর্বাচলে এটিই প্রথম শহীদ মিনার। আর এই শহীদ মিনারের নকশা করেছেন শিল্পী মাহবুবুল হক।
শিশু-কিশোরদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে ইকরিমিকরি প্রকাশনী। শিশুতোষ বই তারা নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে ২০১৬ সাল থেকে। ইকরিমিকরি প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বের করে ছোটদের চার রঙের মাসিক ম্যাগাজিন-ইকরিমিকরি। গল্প, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ, ফটো ফিচার দিয়ে সাজানো থাকে প্রতি মাসের ইকরিমিকরি। বেশিরভাগ লেখা, ছবি, কার্টুন এঁকে থাকে ছোটোরা।
পূর্বাচলের প্রথম এবং একমাত্র শহীদ মিনার নির্মাণের সঙ্গে থাকতে পারা প্রসঙ্গে ইকরিমিকরি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক কাকলি প্রধান বলেন, ২০১৬ থেকেই ইকরিমিকরি বর্ণমালা নিয়ে নানা পরিকল্পনা করে আসছে। ইকরিমিকরি মনে করে, প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় বর্ণমালাকে অনেক আদরে যতনে লালন করা; শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অন্যতম উপায়। আর সে লক্ষেই পূর্বাচলের জয়বাংলা চত্বরে ইকরিমিকরির উদ্যোগে, সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। প্রতি বছর সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে নিয়মিতভাবে বর্ণ উৎসব আয়োজিত হবে এই শহীদ মিনার চত্বরে। এটি হবে সার্বজনীন।
কাকলি প্রধান আরও বলেন, বছরজুড়ে বর্ণমালাকে ঘিরে গবেষণাসহ চর্চা ও কার্যক্রম চলবে। ফেব্রুয়ারি মাসে তা উপস্থাপন করা হবে। যারা বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা নিয়ে কাজ করতে চান, এ উদ্যোগের পাশে থাকতে চান তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানান কাকলি প্রধান।
পূর্বাচলে কেনো এই শহীদ মিনার-জানতে চাইলে এর সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক ও লেখক তুষার আবদুল্লাহ বলেন, ঢাকার নতুন শহর পূর্বাচল। এখানে কোনো শহীদ মিনার ছিল না। তাই ইকরিমিকরির উদ্যোগে, রাজউকের অনুমোদন নিয়ে, শিল্পী মাহবুবুল হকের ডিজাইনে, কেএসআরএমর আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনারের কাজটি শুরু করি। একটা সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করার প্রথম ধাপ হিসেবে। সবার ভালোবাসা, ছোট ছোট অনুদান আর সার্বিক সহযোগিতায় কাজটা শেষপর্যায়ে। কালকের মধ্যে এটা শেষ হবে। ভালো লাগছে, একজন ভাষা যোদ্ধা আহমদ রফিককে দিয়ে উদ্বোধন করাতে পেরে।
নবনির্মিত শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে জয়বাংলা চত্বরের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন বেশকিছু আল্পনা আঁকা হয়েছে আজ শনিবার ভোর থেকে। এই আলপনা আঁকায় অংশ নেয় শিশু-কিশোর আর সর্বস্তরের মানুষ।
এলাকার আদি বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওনারা বাইরে থেকে এসে এখানে শহীদ মিনার বানিয়ে দিলেন। আমরা বিভিন্ন কারণে এত বছরে যেটা করতে পারিনি, সেটা ওনারা করে দেখালেন। সেজন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
শহীদ মিনারের ডিজাইনার শিল্পী মাহবুবুল হক বলেন, ‘এমন একটা ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে থাকতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। সম্মানিত বোধ করছি।’
জয় বাংলা চত্বরে শহীদ মিনারকে ঘিরে বর্ণমালা প্রদর্শনী চলছে। ক্যানভাসের মধ্যে বর্ণমালাগুলো এঁকেছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, আহমদ রফিক, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর, আবুল বারক আলভী, ধ্রুব এষ, মাসুক হেলাল, আহসান হাবীব, দেওয়ান আতিক প্রমুখ।