বর্ষবরণে মেতে উঠেছে শিশুরা
আয়েশা আক্তার। রাজধানীর রাজারবাগের একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। রমনা পার্কে এসেছে বাবা ও ছোট বোনের সঙ্গে। এসেই ছোট বোনকে নিয়ে মেতে উঠেছে খেলায়। জিজ্ঞেস করা হলে আয়েশা জানাল, সে ‘পিছলা’ (স্লাইডার) খেলা করছে।
আয়েশা জানাল, তার খুব ভালো লাগছে। ছোট বোন খাদিজা পারভীনও খুব মজা পাচ্ছে। দুই বোন মিলে অনেক সময় ধরে খেলা করছে, দোলনায় দোল খাচ্ছে। সঙ্গে আছেন তাদের বাবা শাহীন আহমেদ।’
আয়েশা বলল, ‘আমি, আব্বু আর খাদিজা এসেছি। আব্বু নিয়ে এসেছে। বাড়িতে কাজ থাকায় আম্মু আসেনি। খুব ভালো লাগছে। অনেকদিন পর মজা হচ্ছে৷’ পাশে থাকা খাদিজা পারভীন ভাঙা ভাঙা স্বরে বলে উঠল, ‘আমি আরও খেলব বাবা।’
শাহীন আহমেদ বলেন, ‘দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছি পয়লা বৈশাখে। ওদের আনন্দ দেখে আমার আনন্দ হচ্ছে। ওরা যখন খেলছে, মনে হচ্ছে আমিই খেলছি। ওদের আনন্দেই আমার আনন্দ। নতুন বছরের দিন ওদের এভাবে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে।’
শুধু আয়েশা কিংবা খাদিজা নয়, এমন শত শত শিশু মেতে উঠেছে খেলাধুলায়। সঙ্গে আছেন এসব শিশুদের মা-বাবা। সবাইকে খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। শিশুরাও মনের আনন্দে খেলে চলছে।’
পাঁচ বছরের জাহিদুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই আরমান এসেছে রমনা পার্কে। তাদের বাবা রায়হানুল হক তাদের নিয়ে এসেছেন। বাবা তাদের দোলনায় বসিয়ে দোল খেতে সহযোগিতা করছেন। রায়হানুল হঠাতই দুষ্টামি করে জোরে দোল দিচ্ছিলেন। এমন এক সময় আরমান চিৎকার করে উঠলে বাবা দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে বুকে নেন। পরে আবার দোল দিতে শুরু করেন।
জাহিদুল বলছিল, ‘বাবা আমার লক্ষ্মী বাবা৷ দোল দিচ্ছে। ঘুরতে এনেছে। আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। এখানে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, তাই কিনতে পারছি না। মাকে ভিডিও কল দিয়ে দেখালাম। মাও খুব খুশি হয়েছে।’
রাশিদা সুলতানা মা-বাবার সঙ্গে এসেছে ঘুরতে। মায়ের হাত ধরে খোঁপায় ফুলের মালা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। রাশিদা বলল, ‘আজ সারাদিন ঘুরব, খেলব, খাব, আর মজা করব। বাবা আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে।’
শাহিনুর রহমান রোদ বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে রমনায়। সে খেতে চায়, কিন্তু পার্কের মধ্যে কোথাও খাবার পাচ্ছে না। মুখে নকশা আঁকিয়ে নিচ্ছে সে। এর মধ্যে বলে উঠল, ‘এবার পচা বৈশাখ। খাবার নেই, বেশি খেলা নেই।’
শুধু এরাই নয়। পুরো রমনা পার্কজুড়ে এমন বহু শিশু তাদের মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে। এসেছে বাংলা নববর্ষ বরণ করতে। যদিও অন্যান্য বারের চেয়ে এবার স্বল্প পরিসরে বাঙালির এ প্রাণের উৎসব পালন করা হচ্ছে। রোজার দিন হওয়ায় রমনা পার্কের মধ্যে বিশেষ কোনো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি এবার। শুধু দু-একজন আইসক্রিম বিক্রেতাকেই দেখা গেল।