বাংলাদেশ-ভুটান পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একমত
বাংলাদেশ ও ভুটান পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের বাংলাদেশ সফর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আজ বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং উভয় দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, জল-বিদ্যুৎ, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি। করোনা মহামারি মোকাবিলায় ওষুধ পাঠানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ হিসেবে এবং একই ধরনের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের কারণে ভুটান বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফরেন অফিস কনসালটেশন এবং বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দুই নেতা আন্তরাষ্ট্রীয় পানিপথ ব্যবহারের জন্য এবং ট্রানজিট চুক্তির খসড়া প্রটোকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গত বছর ৬ ডিসেম্বর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং সেদেশের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন। ভুটানের একটি সাংস্কৃতিক দল এ উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যেও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।
ড. মোমেন বলেন, পারস্পরিক সম্মান, রাজনৈতিক সমঝোতা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এবং উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভালো প্রতিবেশীসূলভ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ২০০৯ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়, বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ স্বল্পতম ব্যয়ে ‘‘ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ’’ ভুটানে সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ভুটান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারতের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ট্রেন সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। ভুটানের গেলেফু ও বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও সৈয়দপুরের সঙ্গে কার্গো বিমান যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়েও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।