বান্দরবানে ৯ জঙ্গি গ্রেপ্তার, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার
বান্দরবানে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে র্যাব। এ সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার (১২ মার্চ) দিনগত রাতে বান্দরবানের টংকাবতী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সোমবার সকালে বান্দরবান র্যাব কার্যালয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—জামাতুল আনসারের পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), আলআমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে বাহাই (২৯), সাইনুন ওরফে রায়হান ওরফে হুজাইফা (২১), তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ ওরফে রিতেং (১৯), লোকমান মিয়া (২৩), মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল ওরফে শান্ত (৩৫), আমির হোসেন (২১), আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮), শামিম মিয়া ওরফে রমজান ওরফে বাকলাই (২৪)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল (রোববার) দিনগত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১, ১১ ও ১৫ এর যৌথ অভিযানে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়—গ্রেপ্তারকৃতরা নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠনটিতে যোগ দেয়। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখিয়ে, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে উৎসাহী করত। তথাকথিত হিজরতের প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত এবং জঙ্গিবাদবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিত। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে সমতল হতে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা, অন্যান্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চম্পাই পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কমান্ডার ছিল বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়—বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত। কেএনএফ সদস্যরা বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত বলে জানা যায়। পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রামজুদান থেকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে পাইন্দুখাল, ক্যাপলং পাড়া, দুর্নিবার পাড়া, রামধার পাড়া, ওয়াই জংশন হিল, ১৬ মাইল বাজার, ব্রিকফিন্ড বাজার এলাকা হয়ে গত তিন-চার দিন ধরে টংকাবতী এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। পরে সেখানে র্যাবের যৌথ অভিযানে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন জঙ্গি পালিয়ে যায়।’
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।