বিবৃতির ভাষার সঙ্গে সচিবরা দ্বিমত পোষণ করেছেন
যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাঠ পর্যায়ের সবাইকে পারস্পরিক মতবিনিময় ও সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সচিব বলেন, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলা হয়েছে- আপনারা নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন (মতবিনিময়) করবেন। ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে কম হয়, সেখানেই এই ধরনের (বরিশালের মতো) মিস কমিউনিকেশনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে।’
আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আজকের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এজেন্ডাগুলো তুলে ধরেন।
এ সময় বরিশালের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা আমরা ক্লোজলি অবজার্ব করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা মিসকমিউনিকেশন থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে, ক্যাবিনেট থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে সমন্বয় করে কাজ করতে।’
বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনার পর প্রশাসনে কর্মরতদের সংগঠন বাংলাদেশে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দোষীদের বিচার চেয়ে একটি বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতির ভাষা নিয়ে পরে আলোচনা-সমালোচনাও হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। গতকালকে একটা মিটিং ছিল সেখানে। সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা যারা ছিলেন তারা সবাই এই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়া উচিত ছিল না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যারা ছিলেন তারাও অ্যাগ্রি করেছেন- এই ধরনের ভাষা ব্যবহার ভুল হয়েছে। এই ধরনের ভাষা ব্যবহার উচিত হয়নি।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বরিশালের সবাইকে বলা হয়েছে, আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে, আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে। আমরা আগে তাদেরকেই দায়িত্ব দিয়েছি, নিজেরা বসেন। সব লেভেলেই বলা হয়েছে। কেন সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। কার কোথায় ফল্ট আছে, নিজেরা দেখেন। দেখা যাক, তারা সময় নিয়েছেন, নিজেরা আগে দেখুক। আশা করছি, সমাধান হয়ে যাবে।’
গত ১৮ আগস্ট রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিরোধে জড়ায় আওয়ামী লীগ এবং সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমান। সেই ঘটনায় হামলা সংঘর্ষ এবং গুলিবর্ষণে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় ক্ষমতাসীন দলের ৩০ নেতাকর্মী। পরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করেন ইউএনও ও পুলিশ। যার পাল্টা হিসেবে রোববার বরিশালের আদালতে আবার ইউএনও মুনিবুরসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের আবেদন করেন বিসিসির একজন প্যানেল মেয়র ও একজন কর্মকর্তা।
তবে গতকাল রাতে বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসানের সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষই ‘ভুল বোঝাবুঝি’নিরসনের লক্ষে এক ধরনের ‘সমঝোতায়’ পৌঁছেছে।