ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতন : দেশে পাঁচজন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতের বেঙ্গালুরুতে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের সদস্য বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল সোমবার থেকে চলা অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ মঙ্গলবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের অন্যতম মূল হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিকে খুলনা বিভাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদাসহ পাচারচক্রের চার সদস্যকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে বিস্তারিত জানানো হবে।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী শহর বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারের এ খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশও। এ ঘটনায় দুই দেশেই মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় মানব পাচারকারী আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা করেছেন।
মামলার এজাহারে তরুণীর বাবা বলেন, মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন তিনি। তার মেয়ের ছয়-সাত বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী তিন বছর ধরে কুয়েতে থাকে। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে সে আমার বাসায় ও শ্বশুরবাড়ি—উভয় জায়গায় থাকত। মেয়ে ১৫ মাস আগে আমাকে জানায় সে দুবাই যাবে। আমি তাকে নিষেধ করি। তবে এক বছর ধরে সে নিখোঁজ। পরে আমি জানতে পারি, মগবাজারের রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে ফুসলিয়ে বিক্রির উদ্দেশে পাচার করে। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম মেয়ে হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছে। তবে ভিডিও দেখে আমি আমার মেয়েকে চিনতে পারি। ভিডিওতে হৃদয়কে দেখা গেছে। সেই আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোল প্রোটোকলের আওতায় ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স (এমএলএ) অন ক্রিমিনাল ম্যাটারস অ্যাক্ট-২০১২-এর আওতায় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তির (এমএলএটি) ভিত্তিতে যোগাযোগ হচ্ছে। দুই দেশেই মামলা হয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক আইনি কাঠামোয় এই মামলার তদন্ত একটি বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে। অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে বাংলাদেশি ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে তিন-চারজন যুবক অমানুষিকভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ধারণ করা ভিডিওটির একজন নির্যাতনকারীর সঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ছেলের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছবির সঙ্গে মিলে যায়। দেখা যায়, যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকেও শনাক্ত করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে ‘টিকটক হৃদয়’ নামে চেনে।