ভুয়া ভিকটিম সেজে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জেলহাজতে ১১
গোপালগঞ্জে একটি মারপিট মামলায় শহিদুল শেখ (৪২) ভুয়া ভিকটিম সেজে সাক্ষ্য দিতে এসে ধরা পড়েছেন। এ ঘটনায় ১১ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সাথে মামলার বাদী ও বিবাদীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় মারপিট মামলার বাদী মো. তারা মিয়া এজলাস থেকে কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
গোপালগঞ্জে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভুয়া ভিকটিম শহিদুল ইসলাম শেখ গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামের সফিক ওরফে শফু শেখের ছেলে।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের পর ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জামিল আহমেদ বাদী হয়ে মারপিট মামলার ভুয়া ভিকটিম শহিদুল শেখ, বাদী মো. তারা মিয়া ও আসামি পক্ষের ১০ জনসহ ১২ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুশ্রী রায়ের আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী ও বেঞ্চ সহকারী মো. জামিল আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মুকসুদপুর উপজেলা ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সাইফুল শেখকে মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ব্যাপারে ভিকটিম সাইফুলের চাচা মো. তারা শেখ বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় ২৭ সেপ্টেম্বর মো. মোশারেফ মোল্যাসহ ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলার সাক্ষী মূল সাক্ষী ও ভিকটিম সাইফুল শেখ আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। বাদী ও আসামিপক্ষের যোগসাজসে ভিকটিম সাইফুল শেখের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম ভুয়া ভিকটিম সেজে সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় ওঠেন। এসময় বয়সের পার্থক্য দেখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাক্ষীর নাম জিজ্ঞাসা করলে সে প্রথমে তার নাম শহিদুল ইসলাম বলেন। পরে আবার তার নাম সাইফুল শেখ বলেন। এতে আদালতের সন্দেহ হলে সাক্ষীর আইডি কার্ড দাখিলের নির্দেশ দেন। তৎক্ষণাৎ সাক্ষী শহিদুল ইসলাম ঘাবড়ে গিয়ে জানায় তিনি সাইফুল শেখ না। প্রকৃতপক্ষে তিনি হলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি সাইফুলের ছোট ভাই ও ভুয়া ভিকটিম সেজে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেন।
মারপিট মামলার বাদী মো. তারা শেখের ভাতিজা সাইফুল শেখ এই মামলার ভিকটিম। আজ তার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাইফুলের অনুপস্থিতিতে সাইফুলের ছোট ভাই শহিদুল ইসলামকে ভিকটিম সাজিয়ে ভুয়া ভিকটিম সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করেছেন বলে অতিরিক্ত পিপি এম এ হাই আদালতকে এই তথ্য জানান। পরস্পরের যোগসাজসে আদালতে ভুয়া নাম ব্যবহার করে শহিদুল ইসলাম আদালতে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে ডকে দাঁড়িয়ে মিথ্যা পরিচয়ে শপথবাক্য পাঠ করে দ.বি. ১৯৩/১৯৬/২০৫/৪১৯/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।
ফলে আদালতের বিচারক ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন ভূইয়া ভুয়া সাক্ষী, বাদী ও আসামিসহ ১২ জনকে জেলহাজতে পাঠাতে এবং ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
মামলার ভিকটিম সাইফুল শেখ বলেন, আমি ডাঙ্গাদুর্গাপুর গ্রামের ফারুক মুন্সির কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি কিনি। পরে ফারুক আমাকে বেকায়দায় ফেলতে ওই ২৬ শতাংশ জমি থেকে ২ শতাংশ জমি মো. রেজাউল মুন্সি ও হাসান মুন্সির কাছে বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ ঘটনায় আমার চাচা মো. তারা মিয়া বাদী হয়ে মো. মোশারেফ মোল্যা, হাসান, রেজাউলসহ ১০ জনকে আসামি করে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়। আমি সেখানে ওই দুই শতাংশ জমি হাসান ও রেজাউলকে লিখে দিতে বলি। কিন্তু তারা এতে রাজি হয়নি। পরে মামলার বাদী আমার চাচা মো. তারা মিয়া আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে চেষ্টা করেন। সে কারণে তারা মিয়া ও মামলার আসামিরা আমার স্থলে আমার ভাইকে ভুয়া ভিকটিম সাজিয়ে আদালতে হাজির করে ধরা খেয়েছে।