মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে ‘আদালত অবমাননা’, বিচার চাইলেন নাছিম
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তার বিচার দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা-৫ আসনের অন্তর্গত যাত্রাবাড়ী থানার চৌরাস্তা সংলগ্ন পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ দাবি করেন তিনি।
পরে অনুষ্ঠানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১ হাজার ৫শ’ অসহায় খেটে খাওয়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে চাল, ডাল, চিনি, সেমাই, আলু, পেঁয়াজ, দুধ, লবন ইত্যাদির সমন্বয়ে ঈদ উপহারের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘রমজান মাসে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে এনে মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত নামিদামি হোটেলে ইফতার মাহফিল করে।’
এ সময় বিএনপির নালিশের রাজনীতির সমালোচনা করে নাছিম বলেন, ‘তারা বিদেশিদের কাছে নালিশের রাজনীতি করে কিন্তু দেশের মানুষের দুঃখ কষ্টকে বোঝার চেষ্টা করে না। তারা ষড়যন্ত্র, মিথ্যা আর অপপ্রচারের রাজনীতি করে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য। মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়।’
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যখন এই দুর্নীতিবাজরা মুচলেকা দিয়ে দেশে আর ফিরে আসবে না বলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল, তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শুরু হয়েছিল। আজকে যখন বিচার বিভাগ দুর্নীতিবাজ তারেক রহমানের বিচার শুরু করেছে, তখন হঠাৎ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ফরমায়েশি বিচার শুরু করেছে। তাদের অবান্তর কথা বলার যে বদভ্যাস তাতে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য তারা এই ধরনের মিথ্যাচার করলে কনটেম্পট অব কোর্টের (আদালত অবমাননা) অভিযোগে তাদের আদালতের সামনে হাজির করার জন্য দাবি জানাই। কারন স্বৈরশাসকের পকেট থেকেই এদের জন্ম, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই এদের জন্ম। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীদের বিচার হোক এরা চায় না। দুর্নীতিবাজদের বিচার করলে এরা উৎকন্ঠিত হয়। কারণ দুর্নীতিবাজদের বিচার হোক এরা চায় না।”
নাছিম বলেন, ‘যারা একে ফরমায়েশি বিচার বলার চেষ্টা করছে তারা প্রকারন্তে আইনের শাসনের বিরোধী, আইনের শাসনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে, স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে, সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে অপরাজনীতি করছে।’
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর জন্য, মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধির পথকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, আগামী সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসের রাজনীতি, নেতিবাচক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিএনপি অতীতের মতো সন্ত্রাসের পথেই হাঁটছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মেরে যে ধ্বংসের রাজনীতি করেছিলো এটাই তাদের ঐতিহ্য, এটাই তাদের নীতি।’
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তারা শান্তির পথে চলতে জানে না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটে না, মানুষকে ভয় দেখিয়ে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে বিরাজনীতিকরণের পথে হাঁটে। শেখ হাসিনা সরকারের উৎখাতের কথা ভেবে তারা অতীতের মতো লুটপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার জন্য গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
নাছিম বলেন, ‘আমরা মানুষের পক্ষের রাজনীতি করি, মানুষের কষ্ট লাঘবের রাজনীতি করি, স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, নিজের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্যও নয়; মানুষের জন্য জাতির পিতা আজীবন লড়াই করেছেন। তার আদর্শে শেখ হাসিনা মানুষের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি করছেন। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে, তাদের কল্যানে রাজনীতি করেন তিনি।’
সরকার নির্বাচন কমিশনকে রুটিন দায়িত্ব পালনের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জানিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
নাছিম বলেন, ‘মানুষকে হুমকি দিয়ে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, বোমা মেরে, ধমক দিয়ে এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে আমরা দেবো না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঢাকা-৫ আসনের নেতা আলহাজ্ব কামরুল হাসান রিপনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এবং সহ-সভাপতি কাজ শহীদুল্লাহ্ লিটন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ।