মেয়াদ প্রায় শেষ, অপূর্ণাঙ্গ ছাত্রদলের কমিটি
বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু আগের সেই জৌলুস এখন আর নেই। বিশেষ করে বিগত ১২ বছরে ছাত্রদলের কোনো নেতৃত্বই ৯০ দশকের ছাত্রনেতাদের মতো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ৯১-তে বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করা ছাত্রদল যেন নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না কোনোভাবেই।
ছাত্রদলের সেই হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের সেই পুরোনো পদ্ধতিও চালু করা হয়েছিল, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হওয়া ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব। উল্টো সারা দেশের কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়েছে কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ অনেকে। এমনকি ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর। সরাসরি ভোটের কাউন্সিলে ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন খোকন ও শ্যামল। এরপর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ১৫ জনকে সহসভাপতি, ১৫ জনকে যুগ্ম সাধারণ, ১৫ জনকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১১ জনকে সহ-সাংগঠনিক এবং একজনকে সহ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে।
এদিকে কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও অতীতের কমিটিগুলোর মতো বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হবে না বলে ছাত্রদল ও বিএনপির সূত্রগুলো এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছে। চলতি মাসেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা রয়েছে ছাত্রদলের।
ছাত্রদলের সাবেক এক সভাপতি নাম প্রকাশ না করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলেই জানি। কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেয়াদ শেষ হওয়া প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে নতুন করে কমিটির মাধ্যমে ঢেলে সাজাচ্ছেন। ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদও আর বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
নতুন কমিটি করলে সেটি কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই সেটির সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে নতুন কমিটি হলে সেটি দ্রুত সময়ের মাঝেই বাস্তবায়ন করা হবে।
বর্তমানে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ, আগামীতে কোন প্রক্রিয়াতে কমিটির নেতা নির্বাচিত হবে এবং বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে নাকি আহ্বায়ক কমিটি হবে এসব বিষয়ে ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা তো গেল এক বছর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বলছি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে। তারপরও এটা তো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। সংগঠন যেটা করবে সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
কমিটির বিষয়ে কী চাওয়া জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো চাওয়া নেই। সাংগঠনিক অভিভাবক যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটিই আমরা মেনে নিব।’
ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ, এটা সত্য। তবে মেয়াদ শেষে কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি হবে নাকি বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে সেটি আমাদের দলের অভিভাবক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা সেটিই বাস্তবায়ন করব।’
মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমান কমিটির নেতাদের কী চাওয়া জানতে চাইলে আমিনুর রহমান আমিন বলেন, ‘আমাদের কোনো চাওয়া নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেটা ভালো মনে করবেন, আমরা সেটাই মেনে নিব। তবে আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চান বর্তমান কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করে যেতে।’
ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রদল ও আমাদের অভিভাবক হচ্ছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। তিনি ভালো জানেন ছাত্রদলের জন্য কোনটা ভালো হবে, আমাদের জন্য কোনটা ভালো হবে। তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল উনার দেওয়া দিক-নির্দেশনার আলোকে কাজ করব। তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন নাকি নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দিবেন।’
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ওঠা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘ছাত্রদল দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঠিক দিক-নির্দেশনায় ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় কিছু স্বার্থন্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে, এসবের কোনো ভিত্তি নেই।’
শাহ নেওয়াজ আরো বলেন, ‘ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার অল্প কিছুদিন পরই করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যানের নির্দেশে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে সরব ছিল। এমন কি এসব দাবি আদায় করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমাদের ওপর বারবার হামলা করা হয়েছে।’
তবে ছাত্রদলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার পক্ষে। তারা বলেন, এতে যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে, তেমনি নেতৃত্ব জটও কমবে।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া, বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলকে হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।