মৌলভীবাজারে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি, বাড়ছে দুর্ভোগ
মৌলভীবাজারে গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে জেলার দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা।
জানা গেছে, জেলার ৩৫ ইউনিয়নের ৩২৫ গ্রামের প্রায় দুই লাখ ৭ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এদিকে, হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর ছাড়াও জেলার মনু, ধলাই, ফানাই, কন্টিনালা, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে বড়লেখায় পাহাড়ধসে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।
আরও জানা গেছে, বিদ্যুতের সাব স্টেশনে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জুড়ী উপজেলা কম্পপ্লেক্সে কোমর পানি থাকায় কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বন্যায় বড়লেখা উপজেলায় বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রামে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুলাউড়ায় উপজেলায় ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে ও হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতটি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ, জুড়ী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ৬টি ইউনিয়ন ২০ গ্রামের প্রায় সাত হাজার ৫০০, রাজনগর উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের চার হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন। এসব গ্রামের সঙ্গে বিদ্যুৎসংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। উঁচু স্থান ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন অসহায় বন্যার্ত মানুষ। চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন তাদের গরু, ছাগল ও গবাদি পশু নিরাপদে রাখা ও খাবার নিয়ে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, তিনি ইতোমধ্যে জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও রাজনগর উপজেলা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ খবর নিতে ও সহযোগিতা দিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।