রংপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, থানায় ভাঙচুর
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় তাজুল ইসলাম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এ ঘটনার পর পুলিশের পিটুনিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে থানা ঘেরাও করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাজুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি মাদকসেবী ছিলেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন। অভিযান চালানোর সময় তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল পৌরসভার দরদী স্কুলের পাশে মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে মারা যান পাশের পাইকারপাড়া এলাকার তাজুল ইসলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের আভিযানিক দল তাজুল ইসলামকে আটকের পর হাতকড়া পরায়। এরপর তার মাথায় কনুই দিয়ে আঘাত করলে তিনি পাশের দেয়ালে ছিটকে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনার পরই উত্তেজিত হয়ে ওঠে জনতা। তারা মিছিল নিয়ে হারাগাছ থানা ঘেরাও করে। এ সময় থানায় ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। ভাঙচুর করা হয় পৌরসভার সামনে রাখা পুলিশের পিকআপভ্যানসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে রংপুর থেকে বিপুল পুলিশ নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়া হয় সাঁজোয়া যান। ওই সময় লাঠিপেটা ছাড়াও রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে পুরো পৌর এলাকাজুড়ে। উত্তেজিত জনতাকে থামাতে পৌর মেয়র এরশাদুল হকও রাস্তায় নামেন। পরে পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাজুলের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
সেখানে পৌর মেয়র, তাজুলের স্বজনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে থানায় সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
স্থানীয় জনতা ও স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি-অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোর সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত ও একাধিক মাদক মামলার আসামি তাজুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনি নিয়মিত হেরোইন সেবন করতেন। সে কারণে অসুস্থ ছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করা মাত্রই তিনি মলত্যাগ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যায়।’
এ ঘটনাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল লোকজনকে উসকানি দিয়ে থানায় ভাঙচুর চালায়, ইট-পাটেকল নিক্ষেপ করে বলেও অভিযোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, এতে থানা ও যানবাহনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’
এ ছাড়া তাজুল নামের ওই ব্যক্তির নিহতের ঘটনায় একটি অপমৃত্যু এবং থানায় হামলা ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বলেও জানান ডিসি আবু মারুফ হোসেন।
তবে, এ ঘটনায় কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।