রিকশাচালককে হত্যার দায়ে বিজিবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড
বরিশালে রিকশাচালক মো. জামাল খান হত্যা মামলায় শোয়েব হাওলাদার সবুজ (২৯) নামের এক বিজিবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হত্যায় সহযোগিতার দায়ে আজিম (২৯) নামের অপর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
জেলা জজ টি এম মুসা বিচারাধীন বরিশাল জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসামিদের উপস্থিতিতে সোমবার বিকেলে এ রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি সোয়েব বানারীপাড়া উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিজিবি সদস্য হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোয়েবের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৭ জুন বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন মাদারকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল খানের ছেলে এবং নিহত জামাল খানের ভাই আবুল কালাম খান।
অভিযোগে আবুল কালাম খান জানান, তাঁর ভাই মো. জামাল খান (২৮) অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি ২০১৫ সালের ১৫ জুন রাতে বাজার করে বাড়িতে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট পর তাঁর কাছে ফোন আসে। পরে জামাল জানান, পাশের বাড়ির সোয়েব তাঁকে ডাকছেন। এরপর রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় তাঁর খোঁজ করেন স্বজনেরা। এরপর ১৭ জুন সকালে স্বজনেরা জানতে পারেন, জামালের লাশ খাল দিয়ে ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঘাটে রেখেছেন। এরপর জামালকে শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। মরদেহের গলায়, বুকে ও পেটে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার পরদিন ১৬ জুন দুপুরে সোয়েব তাঁর বাবা আদম আলী, ভাই সোহাগ হাওলাদার ও দুই ভাগনিকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
অপরদিকে, বাদী আবুল কালাম খান আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পাশের বাড়ির এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে গভীর রাতে ‘অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায়’ সোয়েব এবং ওই নারীকে দেখে ফেলেছিলেন জামাল। এ নিয়ে সোয়েবের সঙ্গে জামালের ঝগড়া হয়। তখন সোয়েব জামালকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন। পরকিয়া প্রেমের বিষয় জানাজানি হওয়ার কারণে সোয়েব পরিকল্পিতভাবে জামালকে হত্যা করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন আবুল কালাম।
বাদী আবুল কালাম মামলায় সোয়েবের বাবা আদম আলী হাওলাদার, মা সেলিনা ও ভাই সোহাগ হাওলাদারকেও অভিযুক্ত করেন। এ ধরনের মামলা হলে থানা পুলিশ বিজিবি সদর দপ্তরে সোয়েবের বিষয়টি জানায়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে সোয়েবকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।
পরে সোয়েব আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ছাড়া সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আলী আজিমসহ আরও তিন থেকে চার জনের নাম উল্লেখ করেন। পরে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ১২ মার্চ সোয়েব আজিমসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় সোয়েবের মা-বাবা ও ছোট ভাই সোহাগকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। আদালত সুপারিশ গ্রহণ করে তিন জনকে অব্যাহতি দিয়ে আট জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় ২৯ জনের সাক্ষ্য প্রদান করে সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সোয়েবকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং আলী আজিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। বাকি ছয় জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় তাঁদের বেকসুর খালাস দেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ আসামি সোয়েবকে সাত দিনের মধ্যে আপিল করার জন্য আদেশে বলা হয়।
রায় শেষে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পুলিশ প্রহরায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় বলে আদালত সূত্রে জানা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লস্কর নুরুল হক।