সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় হবিগঞ্জের তিনজন নিহত
সৌদি আরবে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় হবিগঞ্জের তিন যুবক নিহত হয়েছেন। দেশটির তাবুক শহরে গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়ে এক বাংলাদেশি সৌদির একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত তিনজন হলেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে বাজিদ মিয়া (৪০), একই গ্রামের উস্তার মিয়ার ছেলে আনহার মিয়া (২৪) ও সদর উপজেলার লুকড়া গ্রামের সালাউদ্দিন (২৪)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের বলাকীপুর গ্রামের তাইদুল ইসলামকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
নিহতদের পারিবার সূত্র জানায়, তিন বছর আগে বাজিদ মিয়া সৌদি আরবে যান। সৌদির তাবুক শহরে তিনি শ্রমিকের কাজ করছিলেন। অপরদিকে ছয় মাস আগে একই গ্রামের আনহার মিয়া সৌদিতে যান। সেখানে গিয়ে তিনিও বাজিদের সঙ্গে তাবুক শহরে অবস্থান নেন। প্রতিদিনের মতো তাঁরা দুজনসহ মোট ১১ জন মঙ্গলবার সকালে কর্মস্থলে যান। দিনভর কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে তাঁরা একটি মাইক্রোবাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। এ সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে আনহার মিয়া, সালাউদ্দিন ও গাড়ির চালকসহ তাদের পাঁচ সহকর্মী নিহত হন। এ সময় বাজিদসহ গুরুতর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে বাজিদ মিয়া মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে গ্রামের বাতাস। নিমিষেই ভেঙে গেছে এসব পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।
নিহত আনহারের চাচাত ভাই লকুজ মিয়া বলেন, ‘জমি বিক্রি ও ইজারা দিয়ে আনহারকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় আমরা তাঁকে হারালাম। এখন আনহারের পরিবারটি কিভাবে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করবে বুঝতে পারছি না।’
লকুজ মিয়া বলেন, ‘গতকাল সকালে আনহার ও বাজিদ মিয়া সেখানকার এক কৃষি ক্ষেতে কাজে যান। কাজের সময় আনহার বাগান থেকে ছবি তুলে ইমোর মাধ্যমে বাড়ির স্বজনদের পাঠান। রাতেই তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পাই। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে আনহারের মা-বাবা কান্না করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন। নিহতদের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার দাবি জানাচ্ছি।’
মক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির রেজা বলেন, ‘সৌদি আরবে গ্রামের অনেক লোকজন রয়েছে। সেখানের উপার্জিত টাকায় অনেকের পরিবারই দেশে সুখের জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবারের সুখের জন্য বাজিদ মিয়া ও আনহার মিয়া সৌদিতে যান। সেখানে তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। তাঁদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। লাশগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে আনার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
মক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ রশিদ আহমেদ বলেন, ‘বুধবার বিকেলে তাদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। বাজিদ মিয়ার চারজন সন্তান রয়েছে। এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সরকারি খরচে যেন তাদের লাশগুলো দেশে আনা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।’
নিহত সালাহ উদ্দিনের আত্মীয় লুকড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য আব্দুজ জাহির বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন চার বছর আগে সৌদিতে যান। সেখানে দুই বছর থাকার পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। করোনার কারণে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে না পারায় অনেকটা অবৈধভাবেই সালাউদ্দিন সেখানে শ্রমিকের কাজ করছিলেন।’