স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যে সময়টিতে এতো দিনের স্বপ্ন বাস্তব হয়ে দেখা দেবে। মানুষ পার হবে দেশের টাকায় তৈরি পদ্মা সেতু দিয়ে। আর সেটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিনটি ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে জনসভা ও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় উদ্বোধন করা হবে সেতু, চলবে জনসভা।
দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জেলায়-উপজেলায় নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এদিকে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাফিক।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে রঙ-বেরঙয়ের ব্যানার ফেস্টুনে ভরে গেছে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সেতু এলাকা পর্যন্ত। মানুষ এখন উদ্বোধনের ক্ষণ গুণছে। এরইমধ্যে সেতুর মূল ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুটি বুঝিয়ে দিয়েছে।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু আজ শনিবার সকালে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। সেখানে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন। সেখানেও পদ্মা সেতুর নাম ফলক উন্মোচন করবেন তিনি। পরে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
মাদারীপুরের বাংলাবাজারে বিশাল জনসভার প্রস্তুতি
জনসভাস্থলে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য লাখ লাখ মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ব্যবস্থা। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ছয় শতাধিক টয়লেট, থাকছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। নদীপথে আসা মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ২০টি পল্টুন। থাকবে ৪০ শয্যাবিশিষ্ট তিনটি অস্থায়ী হাসপাতালও।
প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসভাস্থলের সভামঞ্চ পদ্মা সেতুর আদলে সাজানো হচ্ছে। এসব ঘিরে মানুষের মনে, বিশেষ করে পদ্মাপাড়ের মানুষের ঘরে বইছে উৎসব। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা চৌকি। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (বাংলাবাজার) ঘাটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ বিপুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
গতকাল শুক্রবার জনসভাস্থল পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। পরিদর্শনের সময় তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংবাদপত্রে জারি করা ট্রফিক নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আপনারা জানেন সেতু মন্ত্রণালয়ের একটা নিরাপত্তা কমিটি আছে, তারা কাজ করছে। আমরাও সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে গোয়েন্দা সমন্বয় রয়েছে। এ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি আমরা নিরাপদে পালন করতে সক্ষম হবো।’
ট্রাফিক নির্দেশনা
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ঢাকা মহানগর থেকে যাত্রা শুরুর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
ঢাকা থেকে মাওয়ার গমনাগমন রুট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকা থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন চানখাঁরপুল (নিমতলী) মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাঁ লেন-ধোলাই পাড় টোলপ্লাজা-ধোলাই পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস দিয়ে যাবেন।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিরা জিরো পয়েন্ট-গুলিস্তান আহাদ বক্স-সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাঁ লেন-ধোলাই পাড়-টোলপ্লাজা-ধোলাই পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস দিয়ে যাবেন।
মতিঝিল শাপলা চত্বর ও ইত্তেফাক থেকে আসা অতিথিরা শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক ক্রসিং-হাটখোলা মোড়সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাঁ লেন-ধোলাই পাড়-টোলপ্লাজা-ধোলাই পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস দিয়ে যাবেন।
কমলাপুর, টিটিপাড়া থেকে আসা অতিথিরা কমলাপুর, টিটিপাড়া ক্রসিং-গোলাপবাগ মোড়-ইনগেটসংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাঁ লেন-ধোলাই পাড়-টোলপ্লাজা-ধোলাই পাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস দিয়ে যাবেন।
কাঁঠালবাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের নির্দেশনা
রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা এবং রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা সড়কের যানবাহন লালনশাহ সেতু অথবা যমুনা সেতু ব্যবহার করবে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পারাপার ব্যাহত হতে পারে। তাই লালনশাহ সেতু ব্যবহার করা সমীচীন হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান জেলা সড়কের যানবাহনগুলো চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিঘাট ব্যবহার করবে। ময়মনসিংহ বিভাগ, সিলেট বিভাগ এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকা মহানগরে প্রবেশের পরিবর্তে কালিয়াকৈর-নবীনগর-পাটুরিয়া হয়ে গমনাগমন করবে।
বিমান বাহিনীর ফ্লাইং ডিসপ্লে
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ফ্লাইং ডিসপ্লের আয়োজন করেছে। ৩১টি বিমান এবং হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে ডিসপ্লেগুলো প্রদর্শিত হবে আগামীকাল শনিবার। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআ) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছে।