স্বপ্নের পদ্মা সেতু : ২১ জেলায় খুলে যাচ্ছে বহুমুখী অর্থনৈতিক দ্বার
রাত পোহালেই স্বপ্ন পূরণের ঝিলিক দেখা দেবে বরিশাল, ভোলাসহ ২১ জেলার মানুষের মুখে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন হচ্ছে। খুলে যাচ্ছে বহুমুখী অর্থনৈতিক দ্বার।
সরকারি-বেসরকারি একাধিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজন জানান, প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুটি উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে নতুন দিগন্ত। পাশাপাশি খুলে যাবে এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহুমুখী অর্থনৈতিক দ্বার। পালটে যাবে সামগ্রিক চেহারা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের, কমে আসবে বেকার সমস্যা। বদলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে রাজধানী ঢাকা। যে কারণে বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এখন বইছে আনন্দের জোয়ার। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সরকারি-বেসরকারি প্রায় প্রতিটি মানুষের মাঝেই খুশি পদ্মা সেতুর সাফল্যে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা আগামীকাল শনিবার ২৫ জুন সকালে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন তা খুলে দেওয়া হবে সর্বসাধারণের যানবাহন চলাচলের জন্য।
বিশিষ্টজনেরা জানান, বরিশাল অঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনসহ বৃহত্তম দক্ষিণ জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বর্তমান সরকার।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ-এর সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ফলে সড়কপথে বরিশাল থেকে তিন ঘণ্টায় যাওয়া যাবে রাজধানী ঢাকা। বদলে যাবে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে থাকা জেলাগুলোর মানুষের ভাগ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে একের পর এক সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে কেবল পদ্মা সেতু ছাড়া আর কোনো ফেরি নেই ঢাকা-কুয়াকাটা সড়কে। সে আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আর অল্প কিছু ঘণ্টার মধ্যে। সেতুটি উদ্বোধন হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা।
এ বিষয়ে বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ, গবেষক ও সংগঠক তপংকর চক্রবর্তী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা দ্বার উম্মোচণ হবে।
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. দোস্ত মাহমুদ ও সাংবাদিক অচিন্ত মজুমদার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে বরিশালসহ ভোলা জেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কারণ, দ্বীপজেলা ভোলায় একাধিক পর্যটন কেন্দ্র ও গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের, কমবে বেকার সমস্যা। কৃষিজাত পণ্য সরবরাহে খুলে যাবে নতুন দিগন্ত।
এ প্রসঙ্গে আলাকালে ভোলা জেলার সন্তান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগর উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে বরিশালসহ দ্বীপ জেলা ভোলার অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। আরও সহজ হবে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। দ্বীপজেলা ভোলা হবে দেশের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক জেলা। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেও আনবে অপার সম্ভাবনা।
অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আরও বলেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প যেভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে বৃহত্তম বরিশাল অঞ্চলের খেটে খাওয়া প্রান্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের গুরুত্ব আরও বাড়বে।
সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে বরিশলের হিমায়িত মৎস্য, কাঁচা সবজিসহ সব ধরনের রপ্তানিযোগ্য পণ্য থেকে আয় বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণের খরচ।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘সব প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে এ পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু একটি উন্নয়নের মাইল ফলক, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ দেশের মানুষের কাছে নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে এ সেতু যতদিন থাকবে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমর কীর্তিরূপে গৌরব বহন করবে। এ সেতুটি উদ্বোধন হলে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করবে।’