১৩ বছর আগে নিখোঁজ, বাংলাদেশি ফিরলেন নেপাল থেকে
১৩ বছর আগে ময়মনসিংহ কলেজ রোড থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন রংমিস্ত্রি মো. বাবুল (৪০)। সম্প্রতি নেপাল থেকে তিনি দেশে ফিরেছেন। তবে অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়। তাঁকে পেয়ে খুশি স্বজনরা। তবে একেবারে সহায়-সম্বলহীন পরিবারটি চান সরকারি সহায়তা। জেলা প্রশাসক বলেছেন, বাবুলের পরিবারটিকে বিদ্যমান বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
বাবুল ময়মনসিংহ সদর উপজেলার তিনকোণা পুকুরপাড় এলাকার জনাব আলীর ছেলে। ১৩ বছর আগে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি হারিয়ে যাওয়ায় পরিবার পড়ে মহাসংকটে। মা ময়না (৬০) ছেলের শোকে কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু ছেলেকে ফেরত পাননি। অবশেষে গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে বিমানযোগে বাংলাদেশে আসেন বাবুল। বাবুলের ভাতিজা মাসুদ বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রহণ করেন। চলে যান নেপাল দূতাবাসে।
২৫ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৩টায় নেপালি সমাজকর্মী সুশীলা দেবেশ ও নাড়াই বাবুলকে পৌঁছে দেন ময়মনসিংহে তাঁর পরিবারের কাছে। এর আগে বাবুল ছিলেন নেপালের ‘মানবসেবা আশ্রয়কেন্দ্র’ নামের একটি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানে। সুশীলা সেই সংগঠনের সেক্রেটারি। বাবুল পাঁচ-ছয় বছর আগে মানবপাচারের শিকার হয়ে নেপালে পৌঁছেছিলেন। আশ্রয় পান ওই সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানে। নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীর এক চিঠির বরাত দিয়ে এই খবর নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
রাষ্ট্রদূত ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘বাবুলের পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। এ ছাড়া তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ নন। ফলে তাঁর অনুকূলে আর্থিক সহায়তা ও স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাষ্ট্রদূত।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেছেন, প্রত্যাবাসিত বাবুলের পরিবারটিকে বিদ্যমান বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সংযুক্ত করব। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে তাদের কর্মসংস্থান করে দেওয়া হবে।
বর্তমানে বাবুলের পরিবার শহরের তিনকোণা পুকুড়পাড় এলাকায় একটি বস্তিতে ভিটি ভাড়া করে বসবাস করছে। বাবুলের মা ময়না (৬০) কিছুটা অসুস্থ। আর বাবা জনাব আলী (৭০) অন্যের ফুটফরমাস করে জীবন চালান।
জনাব আলী বলেন, ‘আমি খুব অচল। আমারে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেন। আমার ছেলেটাও বেকার। সংসার চলে না।’
বাবুলের মা ময়না জানান, ছেলেকে পেয়ে তিনি খুশি। বলেন, ‘আন্নেরা আমার পুতেরে কিছু করে দেন, সাহায্য চাই।’
বাবুলের ছোট ভাই সাইদুল বলেন, ‘১৩ বছর আগে আমার ভাই নিখোঁজ হয়। সেই আমাদের কামাই করে খাওয়াইতো। এখন আইছে। আমরা কষ্টে আছি। আমি ফুসকা বেইচা কামাই করি। বাবা-মা অচল। আমাদের কিছু কইরা দেন।’