পদ্মা-মেঘনায় ২ মাস জাল ফেলা বন্ধ
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আজ থেকে দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সালে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চরভৈরবী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা নদী এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সেখানে জাল ফেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ সময় যদি কেউ মাছ ধরে বা নদীতে জাল ফেলে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল, জাল পুড়িয়ে দেওয়া ও পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এসব জরিমানা এক বা একাধিকও হতে পারে।
তবে এ সময় চাঁদপুর জেলার নদী উপকূলীয় চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৪১ হাজার ১৮৯ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে জেলেদের দাবি, সরকার যে সহযোগিতা দেয় তাতে তাদের সংসার চলে না। সরকারি এই সহযোগিতা আরো বাড়ানো হলে জেলেরা নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে।
এদিকে মৎস্য বিভাগ এই কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চরভৈরবী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকায় দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।
ইলিশ সম্পদ রক্ষায় প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত জাটকার মৌসুম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এ সময়ে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময় জাটকা ছাড়া নদীতে সব ধরনের মাছ ধরে জেলেরা। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ ভাগ জাটকা ধরা পড়ে। এ সময় জাটকা ইলিশের প্রধান বিচরণক্ষেত্র পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।
জেলেরা জানান, অভয়াশ্রম চলাকালে কষ্ট হলেও তারা এ সময় নদীতে নামবে না। অভয়াশ্রম চলাকালে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় একটি অসাধু চক্র জাটকা নিধনে মেতে ওঠে। এ সময় অন্য জেলা থেকে যাঁরা এ নদীতে মাছ ধরতে আসেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাঁদের চিহ্নিত করে জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষা করা ও জেলেরা সরকারি সহযোগিতা আরো বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, অভয়াশ্রমকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। জেলেরা প্রতিজ্ঞা করেছেন, এ দুই মাস তাঁরা নদীতে নামবেন না।
এ ছাড়া প্রতি জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়ে গেছে, শিগগির তা জেলেদের হাতে পৌঁছে যাবে। ৪১ হাজার ১৮৯ জন জেলেকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, এ কর্মসূচি সফল করতে পারলে আগামী বছর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে।