পুলিশকে হয়রানি করে প্রতিশোধ!
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা তাঁকে একটি স্থানে আটকে রেখেছে। এসএমএস পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এরপর আরো কয়েক দফা এসএমএস পেয়ে ব্যর্থ অভিযান চালায় পুলিশ। পরে এসএমএস পাঠানো ওই যুবক ওসির মুঠোফোনে কল দিয়ে জানান, এক পুলিশ সদস্য একসময় তাঁকে হয়রানি করার প্রতিশোধ হিসেবে তিনি হয়রানি করেছেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেহেরপুর সদর উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসএমএস পাঠানো ওই যুবককে আটক করে। শেষ হয় তিন ঘণ্টাব্যাপী শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান।
আটক যুবকের নাম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়ার আহসান হাবীবের ছেলে। সাজ্জাদ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র। আহসান হাবীবের দাবি, তাঁর ছেলে মাদকাসক্ত।
সদর থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেহেরপুর সদর থানার ওসি আহসান হাবীবের মুঠোফোনে একটি এসএমএস আসে। এতে বলা হয়, একদল সন্ত্রাসী তাঁকে অপহরণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে আটকে রেখেছে। এসএমএস পেয়ে ওসি দ্রুত পুলিশের কয়েকটি দল নিয়ে গোটা শিল্পকলা একাডেমি এলাকা ঘিরে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এর কিছুক্ষণ পরে ওই একই মুঠোফোন নম্বর থেকে পুনরায় এসএমএস আসে। এবার বলা হয়, তাঁকে মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এক্ষুনি তাঁকে গুলি করে হত্যা করবে সন্ত্রাসীরা। সেখানেও শিল্পকলা একাডেমির মতো অভিযান। ফলাফলও একই। এরপর আরো কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে আরো কয়েকটি এসএমএস আসে। সেসব স্থানে অভিযান চালিয়েও ওই ব্যক্তির হদিস পায়নি পুলিশ। একপর্যায়ে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে অভিযানকারী দলগুলো। কিন্তু হাল ছাড়েননি কেউ। অভিযান সফল করতে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ। অনেকটাই রেড অ্যালার্ট ঘোষণার মতো পুলিশের একাধিক দল বিভিন্ন কৌশলে শহরের অলিগলিতে ব্যাপক নজরদারি ও অভিযান শুরু করে। শেষপর্যন্ত রাত ১০টার কিছুক্ষণ পরে ওই যুবকের কল আসে ওসির নম্বরে। তাঁকে কেউ অপহরণ করেননি বলে স্বীকার করেন। জানান, এক পুলিশ সদস্য তাঁকে হয়রানি করেছিলেন বিধায় তিনি পুলিশকে এমন হয়রানি করেছেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল প্রতিশোধের হাসি। স্বাবলীল ভাষায় তিনি ওসিকে কথাগুলো বলছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
মুঠোফোনে কথোপকথন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর রাত ১০টার দিকে ওসি কৌশলে শহরের এশিয়া নেট মোড় এলাকা থেকে সাজ্জাদ হোসেন নামের ওই যুবককে আটক করতে সক্ষম হন।
সদর থানার ওসি আহসান হাবীব এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রথম এসএমএস পাওয়ার পর থানা, ফাঁড়ি ও ডিবির একাধিক দল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অভিযান শুরু করে। যেকোনো মূল্যে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এতে নিয়মিত কাজের বিঘ্ন ঘটে। পুলিশকে এভাবে ব্যস্ত রেখে শহরে বড় ধরনের কোনো নাশকতা করার পরিকল্পনা কারো ছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।
এর আগে সাজ্জাদকে কখনো গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হয়নি দাবি করে ওসি আরো বলেন, আটকের পর সাজ্জাদ অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে, তিনি একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ।
এ দিকে খবর পেয়ে সাজ্জাদের বাবা আহসান হাবীব রাতেই সদর থানায় আসেন। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর ছেলে নেশাগ্রস্ত। লেখাপাড়ার পাশাপাশি আউটসোর্সিং করে বেশ ভালোই আয় করতেন। এই টাকা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বাইরে যেতেন। একপর্যায়ে তিনি নেশার জালে জড়িয়ে পড়ে। এখন ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। এ কারণে অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা চলছিল সাজ্জাদের।
আজ শনিবার ওসি জানান, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম আজ শনিবার সাজ্জাদকে এক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছে তিনি কোনো সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত নন। তবে মাদকাসক্ত। তাই বাবার অনুরোধে তাঁর জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে সাজ্জাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এরপর এ ধরনের কাজ করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে।