‘আমি ওই থানায় থাকব না’
সাংবাদিকদের আসার খবর পেতেই হাসপাতালের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘আমার একটা কথা আছে।’ কোনো প্রশ্ন বা জবাবের অপেক্ষা না করে ২৫-২৬ বছর বয়সী ওই নারী পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, ‘আমি তুরাগ থানায় থাকি। ওখানকার ওসি, আমাকে সব সময় একটা মানসিক চাপের মধ্যে রাখে। ওখানে মমিন নামে এক মুন্সি আছে, এএসআই আছে, যে আমাকে সব সময় প্রেসারে রাখে...।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য স্থাপিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ফটকে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে চলেন ‘ধর্ষণের শিকার’ নারী কনস্টেবল। তিনি বলেন, ‘আমি ওই থানায় থাকব না।’
ওই নারী পুলিশ সদস্য তুরাগ থানায় কর্মরত। আর তাঁর সাবেক স্বামী খিলগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। সাবেক স্বামী চারজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওই নারীর।
নারীদের যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের বহু ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এসব ঘটনার বিচার না হওয়া নিয়ে প্রতিনিয়তই হচ্ছে মিছিল-মিটিং। ব্যবস্থা নিতে না পারায় অভিযোগ উঠছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও। এর মধ্যেই পুলিশেরই এক সদস্য পুলিশেরই কর্মকর্তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন।urgentPhoto
অবশ্য এ ব্যাপারে জানতে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব এ খুদাকে ফোন করা হলে তিনি এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। আমি কেন মানসিক চাপে রাখব। সে আসে, ডিউটি করে আবার চলে যায়। আমি কীভাবে ঝামেলা করব?’
ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন ওই নারী কনস্টেবল আগে কখনো এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে ওসি মাহবুব এ খুদা বলেন, ‘আপনাদের কাছেই এই অভিযোগ প্রথম শুনলাম।’
মাহবুব এ খুদা আরো বলেন, ‘থানায় আরো একজন নারী কনস্টেবল আছেন। তাঁর তো কখনো সমস্যা হয় নাই।’
মমিন নামে এক ‘মুন্সির’ ব্যাপারে ওসি বলেন, ‘একজন কনস্টেবল আছেন মমিন নামে। কিন্তু তাঁর ব্যাপারেও কখনো এ ধরনের অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ আসলে অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’
নারী পুলিশ সদস্যের ভাই জানান, ২০১১ সালে তাঁর বোনের বিয়ে হয় ওই এএসআইয়ের সঙ্গে। ২০১৪ সালে তাঁদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তাঁদের ঘরে এক সন্তানও রয়েছে। গত ১০ জুন বিকেল ৪টার দিকে এএসআই ফোন করে তাঁর বোনকে সব ঝামেলা মিটিয়ে নতুন করে সংসার করার কথা বলেন। পরে তাঁর বোন কথামতো সেদিনই ওই তাঁর বাসায় গেলে তিনি ও তাঁর চার সহযোগী মিলে বোনকে ধর্ষণ করেন।
পুলিশ সদস্যের ভাই আরো জানান, এর পরের দিন উদ্ধার হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। এরপর ১২ জুন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি হলে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য তাঁকে আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ওই নারী পুলিশ সদস্যের হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি ‘ধর্ষণের শিকার’ ওই নারী কনস্টেবলের বোন বলেন, ‘আমার এই বোন এবং বোনের জামাইর মধ্যে ইদানিং বিভিন্ন মামলা চলতেছে। এর আগে ওকে ছেড়ে দিছে, তালাক দিয়া দিছে। তালাক দিয়ে দেওয়ার পর মনে করেন ওর একট মেয়ে বাচ্চা আছে। দুই বৎসর এগারো মাস। প্রায় তিন বছর। এই বাচ্চাটাকে প্রায় সাত মাস ধরে ছিনিয়ে নিয়ে আসছে। এরকম পাঁচ ছয়জন মাস্তান নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে, হঠাৎ করে আক্রমণ করে, পিস্তল কিরিচের মুখে ভয় দেখিয়ে বাচ্চাটারে ছিনিয়ে নিয়ে আসছে।’
নারী কনস্টেবলের বোন দাবি করেন, মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে তাঁর বোনকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “চিকিৎসার জন্য রাজারবাগের উদ্দেশ্যে আসছে ও। আসার পর ওর স্বামী মোবাইল নাম্বার কিভাবে যেন ট্রাকিং নাকি কি জানি কি করে যেন, কোন সময় কোনজায়গায় কোন অবস্থানে আছে। ওটা ট্রাকিং করছে। করে ওকে ওখান থেকে কি বলে, খিলগাঁও নিয়ে গেছে। খিলগাঁও নেওয়ার পরে বলতেছে- ‘তুমি আসো, আসছোই যখন বাচ্চাটার সাথে একটু দেখা করো। বোন তখন বললো, না আমি বাসায় যাবো না, তুমি তাইলে খিলগাঁও থানায় নিয়ে আসো, আমি খিলগাঁও থানায় গিয়ে বাচ্চা দেখবো। তোমার বাসায় যাবো না।’ তখন আমার বোনের শাশুড়ির সাথে কথা বলাইছে। ওর ভাসুরের সাথে কথা বলাইছে ওর স্বামীর নাম্বার থেকে যে, বাসায় আসো অসুবিধা নাই। মাইসা (শিশুসন্তান) বাসায় আছে। তখন ওকে জানি কি খাওয়াইছে কি করছে ওর আর সেন্স নাই। একপর্যায়ে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে, সাথে আরও চারজন ছিল সিভিলের।”
ওই নারীর বোন আরো বলেন, ‘এই ঘটনা যেন শাস্তি পায় এটাই হইছে আমাদের কাম্য। একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে একটা ইয়ে করল।’