বন্ধ কাগজকলের খরচ বছরে দেড় কোটি টাকা
১৩ বছর ধরে বন্ধ আছে পাবনার পাকশীর কাগজকল ‘দি নর্থবেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড’। বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ কাগজকলের যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে, চুরিও হচ্ছে। কারখানার বিশাল এলাকা পাহারা দিতে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা, বছরে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা। জনপ্রতিনিধিদের বারবার দেওয়া আশ্বাসেও চালু হয়নি দেশের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান।
২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসানের অজুহাতে কাগজকলটি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বর্তমানে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী লোকসানের কারণ দেখিয়ে কাগজকলটি বন্ধ করে দেন।
এর পরই এই কারখানার ১৩১ জন কর্মকর্তা, এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কারখানা কেন্দ্রিক হাজারো কর্মজীবী মানুষ ও পরিবার বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরিসহ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
১৯৬৭ সালের ৩ মার্চ শুরু হওয়া কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালের জুন মাসে। জার্মান, ইতালি ও ফ্রান্স এ কাগজ কারখানা নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেয়। দৈনিক ৬০ মেট্রিক টন হিসেবে বার্ষিক ১৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ১৯৭০ সালের ২৫ জুলাই কাগজ উৎপাদন শুরু হয়। তবে কারখানাটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ১৯৭০-৭১ সালে। পরীক্ষামূলকভাবে দুই হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন কাগজ উৎপন্ন হয়।
কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো দেশের বিভিন্ন চিনিকল থেকে প্রাপ্ত আখের ছোবড়া। লেখার সাদা কাগজ ছাড়াও বাদামি, মেনিফোল্ড ইত্যাদি ধরনের কাগজ এখানে তৈরি হতো।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সয়ে কারখানাটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করে ১৯৭৫ সালের মার্চ মাস থেকে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়। কারখানার কর্মকর্তা ছিলেন ১৩১ জন, শ্রমিক-কর্মচারী এক হাজার ১৩৮ জন।
বৃহদাকার এই কারখানা ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লোকসানের প্রধান কারণ ছিল দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কারখানা চালুর আশ্বাস দেন। এ জন্য ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নবরূপায়ণ (বিএমআরই) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরে তা সফল হয়নি।
কারখানা বন্ধের পর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব কর্মকর্তা, একজন সহকারী ছাড়াও রয়েছেন ৫০ জন আনসার সদস্য ও কারখানার নিজস্ব ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। সব মিলিয়ে ৭২ জন কর্মচারী বন্ধ থাকা এই মিলটি পাহারা দিচ্ছেন। প্রতিমাসে তাঁদের বেতন ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। বন্ধের পর থেকে গত ১৩ বছরে সরকারকে খরচ করতে হয়েছে ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকশী কাগজের কারখানা চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার আইন উপবিভাগের কর্মকর্তা সাজেদুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নর্থবেঙ্গল পেপার মিলটি প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে ন্যস্ত করা আছে। একবার এটি ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দর নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে কিনতে আগ্রহী একটি পক্ষ কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে রাখে। মামলাটি এখনো চলমান। ফলে মিলটি নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।’