রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে বিএনপির ‘রূপকল্প ২০৩০’
চলতি সপ্তাহজুড়ে এ বিষয়টিই রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল। বিএনপি একটি রূপকল্প নিয়ে আসছে। অবশেষে গত বুধবার ‘রূপকল্প ২০৩০’ ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৩০’ এর নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় আওয়ামী লীগ থেকে যে প্রথম প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে, এটাকে ধাপ্পাবাজি, ফাঁকা বুলি এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয়, এভাবে তর্কবিতর্ক না করাই ভালো। বিএনপিকে আরো সুনির্দিষ্ট করতে হবে যে কীভাবে এ ভিশনটা কার্যকর হবে, বাস্তবায়িত হবে। তারা অতীতে ক্ষমতায় ছিল, তারা পারেনি। সেখানে কী কী দুর্বলতা ছিল সেগুলো তারা আলোচনা করবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৩০’-এ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে কোনো কথা নেই। বিষয়টি জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক’।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রূপকল্প ২০৩০’ ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। ৩৭টি বিষয় নিয়ে বিএনপির চিন্তাধারার কথা জানান তিনি।
‘রূপকল্প ২০৩০’-এর ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ এনটিভিকে বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, উনি রামপাল বন্ধ করে দেবেন তা এখানে (রূপকল্প ২০৩০) বলেননি। আগে কিন্তু বলেছেন। তার মানে কী? ওনার লোকেরা ওনাকে প্রভাবিত করছে? ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই লেনদেন আরম্ভ হয়ে গেছে?’
বাগেরহাট জেলার রামপালে শুরু হয়েছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ওই প্রকল্পে কাজ করবে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই আছে বিতর্ক। কাছাকাছি সুন্দরবনের অবস্থান থাকায় পরিবেশবাদীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এসব সংগঠনের দাবি, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য।
ওই ব্যাপারে ‘রূপকল্প ২০৩০’-এ কোনো কথা নেই বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ডা. জাফরুল্লাহ আরো বলেন, ‘১৯৭৪ সালের কালা কানুন বাতিল করবেন বলে বলেছেন। খুব ভালো কাজ। কিন্তু এই যে হাজার হাজার কর্মীকে গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে তা নিয়ে উনি কিছু বলেননি। শ্রমিকের বেতন ১৪-১৫ হাজার টাকা— এ নিশ্চয়তা তিনি দেননি। আওয়ামী লীগ আমলে ৭০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। উনি ওই টাকা ফেরত আনার কী ব্যবস্থা নেবেন?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা কিন্তু আমি মনে করি অংশগ্রহণমূলক উন্নত রাজনীতির সংস্কৃতিরই একটা লক্ষণ। রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটা পরিবর্তন কিন্তু আনার চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এটা করে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, আমরাও যদি ক্ষমতায় যাই এমন একটি রূপকল্প দাঁড় করাই তবে জনগণ আমাদের কথা শুনবে। এটাকে বলব পজিটিভ বিষয়।’
গোবিন্দ চক্রবর্তী আরো বলেন, ‘বিএনপির নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই রূপকল্পটি আমরা দেখতে পারি। কিন্তু ধারাগুলোর মধ্যে আমরা বৈপরীত্য দেখতে পাব।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইন। ১৯৯১ সালে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল তিনি তা বাতিল করবেন। ২০০১-এও তাই ছিল। কিন্তু তা করেননি। তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কি একবারও ভাবেননি যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি?’