বরগুনায় পানিবন্দি অর্ধশতাধিক গ্রাম
উপকূলীয় জেলা বরগুনায় পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে ভেঙে গেছে একাধিক বেড়িবাঁধ। খরস্রোতা তিন নদী বুড়িশ্বর, বলেশ্বর ও বিষখালীর উঁচু জোয়ারের পানিতে এখন ভাসছে বরগুনার গ্রামের পর গ্রাম। পানিতে ঘরবাড়ি ও ফসলি ক্ষেতসহ ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি।
অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে জেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা ও বেতাগী উপজেলার ১২টি স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চরম হুমকির মুখে রয়েছে। জোয়ারের চাপে আমতলী পৌরশহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লকের ১৫০ মিটার ধসে গেছে।
এ ছাড়া সিডর, আইলা ও মহাসেনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না হওয়ায় সেসবের ভাঙা স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পাথরঘাটা উপজেলার জীনতলা, পদ্মা, রুহিতা, বাদুরতলা, ছোট টেংরা, গাববাড়িয়া ও বামনা উপজেলার পুরাতন বামনা চেচাং, রুহিতা, সোনাখালী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
একই কারণে জোয়ারের চাপে বেতাগী উপজেলার আলিয়াবাদ, কালিকাবাড়ী, ঝোপখালী, বোলানাথপুর, গাবতলী, জোয়ার করুনা, গেড়ামর্দন, জঘাইখালীসহ আমতলী উপজেলার ফসইরবুনিয়া, বটখালী, গুলিশাখালী গ্রামের বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া, আশারচর, জয়ালভাংগা গ্রামের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার স্থানীয় অধিবাসী ও জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর যেতে না যেতেই আসে আইলা, আইলার পর মহাসেন। মহাসেনের আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অস্বাভাবিক জোয়ারের হানা। একের পর এক এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চরম হুমকির মুখে এখন বরগুনাসহ সমগ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ পরিস্থিতি। তিনি জানান, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৮ সালের আইলায় কেবল উপকূলীয় জেলা বরগুনার ৮৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় ৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। বর্তমানে সামান্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বরগুনার ছয়টি উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম। ভেসে যায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি, মাছের ঘের আর শত শত ঘরবাড়ি।
পাউবো বরগুনার নির্বাহী পরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সিডর, আইলা ও মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের সিকিভাগও মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি সিডর-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বরগুনা-পটুয়াখালী-পিরোজপুরের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এবং রেগুলেটর নির্মাণ ও মেরামতের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
বেড়িবাঁধের সঙ্গে মানুষের শরীরের তুলনা করে এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একবার রোগ ধরলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার না করলে দ্রুত তা ক্ষয়ে যায়। পরে এ রোগ সারাতে শতগুণ বেশি অর্থ খরচ পড়ে।’