বরগুনায় হবে পায়রা সেতু, পূরণ হবে প্রাণের দাবি
বরগুনার আমতলী-পুরাকাটা পথে রয়েছে খরস্রোতা পায়রা নদী। প্রশস্ত প্রায় তিন কিলোমিটার। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর সেই পথ পাড়ি দিতে হয় ফেরিতে করে। সেই কষ্ট এবার দূর হবে। সেখানে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেতু নির্মাণে সহায়তা করবে চীন।
ওই সেতু নির্মাণ হলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ হবে। রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর বরিশাল, খুলনাসহ পিরোজপুর, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী জেলা, সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ হবে আরো সহজ।
গত বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তরের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে আরো নতুন দুটি সেতু (নবম ও দশম মৈত্রী সেতু) নির্মাণে চীন সরকার সহায়তা করবে। আর সম্ভাব্য ওই সেতু দুটি নির্মিত হবে বরগুনা জেলার আমতলী ও পটুয়াখালী জেলার গলাচিপায়। মন্ত্রী আরো জানান, আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মিত আচমত আলী খান বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি দুই দেশের বন্ধুত্বের সপ্তম সেতু। ৭০০ মিটার সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকা। মূল এই সেতুর পাশাপাশি টেকেরহাট, টুমচর ও আঙ্গারিয়ায় আরো তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২০ আগস্ট সেতুটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বরগুনা এসেছিলেন তখন তাঁর কাছে বরগুনা ও বরগুনাবাসীর উন্নয়নে ৪২ দফা দাবি পেশ করেছিলেন তিনি। সেই ৪২ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল বরগুনা-আমতলী পথের পায়রা সেতু।
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, পায়রা সেতু নির্মাণ হলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করেন। পায়রা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ার পরপরই পর্যায়ক্রমে বরগুনা-কাকচিড়া রুটের বিষখালী নদীতে আরে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে, যা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করবে। এতে বঙ্গোপসাগরের রুপালি ইলিশ থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, মাছ, গাছ সবই তখন অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চল, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এদিকে পায়রা সেতু নির্মাণের বিষয়ে এখনো বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছে বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ কিছুটা বিশ্বাস করতে পারলেও তা কবে বাস্তবায়ন হবে কিংবা নিজেদের জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
তবে সেতুমন্ত্রীর দেওয়া গত বুধবারের তথ্যের পর থেকে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে বরগুনার সচেতন মহলের মধ্যে। পায়রা সেতু বাস্তবায়নের খবর শুনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনন্দ মিছিল করে জেলা ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগ।
মিছিল শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা জেলা পরিষদের প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা তরুণ লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ, জেলা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুরাদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া সাবু, ইউসুফ হোসেন সোহাগ, সাবেক ছাত্রনেতা শাওন তালুকদার প্রমুখ।