বাঁধ ভেঙে ভোলায় পানিবন্দি ১০ হাজার মানুষ
মেঘনার উত্তাল ঢেউ আর উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া জেলার নিম্নাঞ্চলসহ ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মেঘনা নদীর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ভাঙন রোধের কাজ বন্ধ আছে। গত পাঁচদিনেও ত্রাণ পৌঁছেনি দুর্গত এলাকায়।
সরেজমিনে ইলিশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভাঙন থেকে নিজেদের বাড়িঘর বাঁচাতে মানুষ ব্যস্ত। নদীর পাড়ের পাকা ভবন ধসে পড়ছে।
পথের গাছ কেটে নেওয়া, ঘর ভেঙে অন্যান্য আসবাব নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছে ভোলায়।
একদিকে নদীর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করা আর অন্যদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে মেঘনা নদীর পানি ঢুকে ইলিশা ইউনিয়নের বহুগ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। কেবল ইলিশা ইউনিয়ন নয়, ভোলা সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার বহু গ্রামে ঢুকেছে বানের পানি। মানুষ যে যেভাবে পারছে ঘরের মালামাল সরিয়ে পাকা রাস্তা আর উঁচু স্থানে নিয়ে রাখছে।
ভাঙন রোধের কাজ বন্ধ রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আব্দুল মুনাফ জানান,একদিকে নদীর ভাঙন আর অপরদিকে ভাঙা বাঁধ দিয়ে মেঘনা নদীর পানি ঢুকে ঘরবাড়ির সব মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার জীবনে এমন দুর্যোগ আগে কখনই দেখিনি। পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ঘর ধসে পড়ছে। তাই দ্রুত ঘরের মালামাল ট্রলারে করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যখন নদীর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করেছে ঠিক ওই মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা এলাকার জন্য আরো ক্ষতি হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কাজের অনিয়ম দেখছেন না। কারণ সব সময় তাঁদের সাথে ঠিকাদার থাকছেন।’
নদীর ভাঙন রোধের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল হেকিম। নদী ভাঙনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ রোববার আমি ঢাকায় যাব। সেখানে নকশা আর জিও টিউবের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এসে কাজ করা হবে।’
এদিকে প্লাবিত হওয়ার পর গত পাঁচ দিনেও সরকারি বা বেসরকারি কোনো ধরনের ত্রাণ পৌঁছেনি দুর্গত এলাকায়।
অন্যদিকে ত্রাণ পৌঁছে দিতে না পারার কথা স্বীকার করেছেন ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল আহমেদ, ‘এই কার্যক্রম অচিরেই শুরু করা হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য ও খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করব।’