শিশু নির্যাতন, হাকিমের বিরুদ্ধে মামলা নিল না পুলিশ
১০ বছর বয়সি নির্যাতিত গৃহকর্মী শিশু বীথির বাবা গোলাম রসুলের মামলা নেয়নি সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ। গত ১৯ আগস্ট সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলামের বাসার ব্যালকনিতে আটক অবস্থায় বীথিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ আব্দুল সাদী।
নির্যাতনের অভিযোগ এনে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাতাশাকে আসামি করে গতকাল মঙ্গলবার থানায় মামলার জন্য আবেদন করেছিলেন বীথির বাবা গোলাম রসুল।
এরপরও মামলা নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি সদর থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি নিজেই মামলার জন্য আবেদনপত্রটি জমা দেন সাতক্ষীরা সদর থানায়। আজ বুধবার সকালে সদর থানা থেকে গোলাম রসুলকে জানানো হয়েছে মামলাটি রেকর্ড করা যাবে না। তবে কেন মামলাটি রেকর্ড হয়নি বা হবে না তার কারণ পুলিশ রসুলকে জানায়নি।
উদ্ধারের পর বীথির গায়ে পোড়া, ছ্যাকা ও আঘাতের ৩০টিরও বেশি চিহ্ন পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানিয়েছিল। বীথি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বড় আমিনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
বীথির বাবা গোলাম রসুল সাংবাদিকদের জানান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখের কাছে তিনি মামলার আবেদন জমা দিয়েছিলেন। তিনি জানান, মামলার আবেদনটি পুলিশ রেকর্ড করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর কারণ তাঁর জানা নেই বলে জানান তিনি ।
মামলার আবেদনে গোলাম রসুল উল্লেখ করেন, এক বছর দুই মাস আগে তাঁর গ্রামের রুস্তম আলী বিশ্বাসের ছেলে সাতক্ষীরার আদালত কর্মচারী সোহরাব হোসেন ওরফে সাগর বীথিকে ভালো কাজ ও পাশাপাশি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। পরে তিনি বীথিকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলামের পলাশপোলের ভাড়া বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে রেখে দেন।
গোলাম রসুল আরো বলেন, গত ১৯ আগস্ট তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর মেয়ে বীথি বিচারিক হাকিমের বাসায় শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। বীথির দেহে বহু ক্ষত চিহ্ণসহ সাতক্ষীরার প্রধান বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা, সদর থানার পুলিশ এবং সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বীথিকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
রসুল জানান, খবর পেয়ে রাতেই তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে এসে তাঁর কংকালসার হাড়জিরজিরে মেয়েকে দেখতে পান। তিনি জানতে পেরেছেন যে বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাতাশা বীথিকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং অভুক্ত অবস্থায়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই দিনের কয়েক ঘণ্টা বাড়ির ব্যালকনিতে অবরুদ্ধ করে রাখতেন। এমন কি পানিও খেতে দিতেন না বলেও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি । মামলায় তিনি দুইজনকে আসামিভুক্ত করেছেন। এঁরা হলেন বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাতাশা।
গোলাম রসুল তাঁর আবেদনটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। মেয়ের শারীরিক চিকিৎসা এবং পারিবারিক কারণে মামলা করতে বিলম্ব হলো বলেও জানান তিনি ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাতক্ষীরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসেম বলেন ‘গোলাম রসুলের মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি।’ এর কারণ কী তা জানতে সরাসরি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি। তবে ওসিকে টেলিফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।