সেই বখাটেকে ধরিয়ে দিল জনতা
হবিগঞ্জে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় মারপিট ও ভিডিও করার ঘটনায় আলোচিত সেই বখাটে রুহুল আমিনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। আজ শুক্রবার দুপুর ১টায় হবিগঞ্জ শহরতলির রিচি গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ মুরুব্বিরা তাকে নিয়ে সদর মডেল থানায় আসেন। এ সময় পুলিশ রুহুলকে গ্রেপ্তার করে।
urgentPhoto
তবে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন জানান, বখাটে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন। রিচি গ্রামের লোকজন আজ রুহুল আমিনকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে রুহুলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয় লোকজন জানান, রুহুল আমিন হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকায় মামার বাসায় থেকে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাকে না পেয়ে পুলিশ আজ শুক্রবার সকালে রুহুল আমিনের মামি মার্জিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ অবস্থায় স্বজনরা মুরুব্বিদের মাধ্যমে রুহুল আমিনকে ধরে থানায় নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। পরে মার্জিয়া বেগমকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর হবিগঞ্জ থানাহাজতে রুহুল আমিন দাবি করেন, উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় ওই ছাত্রীর এক আত্মীয় তাকে অন্য ছাত্রছাত্রীর সামনে মারধর করেছে। এ কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছাত্রীকে মারধর করেছে। তবে ভিডিও করার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। কে ভিডিও করছে সে জানে না।
এদিকে প্রকাশ্যে ওই স্কুলছাত্রীকে মারধরের ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন ছাত্রী হবিগঞ্জ শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ বখাটে রুহুল আমিন ওই ছাত্রীর বাহুতে হাত দিয়ে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। এর পর ছাত্রীকে গালাগাল করতে করতে তার গালে বেশ কয়েকটি চড় মারে। ভিডিওচিত্রের শেষের দিকে দেখা যায়, ছেলেটি মেয়েটিকে মারধরের হুমকি দিতে দিতে চলে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, এ সময় রুহুল আমিনের এক বন্ধু মোবাইল ফোনে এ দৃশ্য ধারণ করে। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলেটির বন্ধু ফেসবুকে এ ভিডিওচিত্র আপলোড করে। ভিডিওচিত্রটি আপলোড করার পর দেশজুড়ে তা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছেলেটিকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
উত্ত্যক্তের শিকার মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে একই এলাকার রুহুল আমিন (১৫) দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার রুহুল আমিনের পরিবারের কাছে নালিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।’
মেয়েটির মা বলেন, ‘স্কুল ছুটির পর তারা সব বান্ধবী হগলতে মহিলা কলেজের গেটথে বার হইয়া, আরো তিনটা মেয়ে আছিল। তবে দুইটা মেয়ে বাইর হইয়া চলি আইছে, আর একটা মেয়ে আমার মেয়ের লগে আইছে। আমার মেয়ের লগে ওই ছেলে আইয়া আমার মেয়েরে চড়াইয়া ওরাইয়া এরপর কইতাছে, তুই হৃদয়ের বাফেরে দিয়া আমারে মাইর খাওয়াইছস, এরপর হৃদয়ের বাফের হাত কাইটা আইনা তোর হাতে দিমু যেদিন হেদিন আমার নাম রুহুল আমিন।’
মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে লেকাপড়া করতে পারে না, যাইতে পারে না। এরপর ছেলের গার্ডিয়ানের কাছে অনেকদিন বিচার দেওয়া হইছে। গার্ডিয়ানে কইছে আর কোনোদিন মেয়ের পিছে লাগত না। এরপর তারার বোইনের পেছনে লাগার কারণে অন্য ছেলেরা তারে মারছে। মারার পর সে রাগ হইয়া আমার মেয়েরে মারছে। আমি এইটাই আপনারার কাছে বিচার চাই।’
আপসের জন্য দৌড়ঝাঁপ!
এদিকে, সকালে হবিগঞ্জে মানববন্ধন করেছে নাগরিক সমাজ। বেলা ১১টায় এম সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কবি তাহমিনা বেগম গিনি, হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার চৌধুরী, সুজনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী, কমরেড পীযূষ চক্রবর্তী, ডা. এস এস আল আমিন সুমন, তোফাজ্জল সোহেল প্রমুখ।
প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার চৌধুরী বলেন, মেয়েটি লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছে না।
ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, সমাজের কিছু মাতব্বর বিষয়টি আপস করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।