নানা আয়োজনে বাউলসম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ভাটি বাংলার প্রাণপুরুষ বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১২ সেপ্টেম্বর। এই উপলক্ষে সুনামগঞ্জ সদরে ও বাউলসম্রাটের নিজ বাড়ি দিরাই উপজেলার উজান ধল গ্রামে নানা আয়োজন করা হয়। তিন দিন আগে থেকেই তাঁর ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এসে ভিড় করেন তাঁর বাড়িতে। সেখানে গানের আসর বসানো হয়। সুনামগঞ্জ শহরে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের কালনী নদীর তীরে জন্মগ্রহণ করেন। নানা অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যে মধ্যে বেড়ে ওঠা বাউল করিমের বয়স যখন ১২ বছর, তিনি রাখালের চাকরি ছেড়ে গ্রামের পাশের ধলবাজারের এক মুদির দোকানে কাজ নেন। শাহ আবদুল করিম এক সময় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড় এলাকা চষে বেরিয়েছেন। আর কালে কালে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে তা নিয়ে গান রচনা করে গেছেন। এই গানে যেমন আনন্দ ছিল তেমনি ছিল জীবন সংগ্রামের প্রেরণা। তিনি গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউলা গানে মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের, আনন্দের, প্রেম, বিরহ, স্রষ্টার সৃষ্টি দর্শন নিয়ে গান গাইতে গাইতে পুরো ভাটি অঞ্চলে তাঁর নাম ছড়ায়। এরপর তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে বাউলরা তাঁকে বাউলসম্রাটের উপাধি দেন। তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা ও গণসংগীত গেয়ে গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন। গান গাওয়ার জন্য ধর্মান্ধদের হাতে নির্যাতিত ও ঘরছাড়া হলেও তিনি অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান প্রচার করে গেছেন। এই করিমই একসময় নিয়তির কাছে হার মানেন। জীবনের শেষ দিনগুলো তাঁর বাড়ির বিছানায় ও হাসপাতালের বিছানায় কেটেছে। একসময় সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই ধরা থেকে বিদায় নেন তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন জানান, বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম সুনামগঞ্জ তথা বাংলাদেশর গর্ব। এই গুণী মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সুনামগঞ্জ স্পন্দন সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট অলক ঘোষ চৌধুরী জানান, বাউলসম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তারা শুক্রবার আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ ছাড়া আজ সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলার একাডেমির উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
শাহ আবদুল করিমের একমাত্র ছেলে বাউল নূর জালাল বলেন, ‘আমার বাবা জীবদ্দশায় কোনো কিছু চাননি। আমিও কিছুই চাই না। শুধু আমার বাবার মাজারটি ও আমার বাবার সৃষ্টিকর্ম যেন মানুষের উপকারে আসে এবং স্মৃতিগুলো যেন সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হয়। একটি জাদুঘর করে দেওয়া হয়।’