আলোচিত বিউটি হত্যায় বাবাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে বিউটির বাবা সায়েদ আলী, প্রতিবেশী চাচা ময়না মিয়া ও ভাড়াটে খুনি কামাল মিয়াকে আসামি করা হয়েছে।
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম আজ রোববার হবিগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আজ দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। এ সময় তিনি বলেন, বিউটি হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে একটি আলোচিত ঘটনা। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের ১৪ বছরের কিশোরী বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান বখাটে বাবুল মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ-নির্যাতন করা হয় তাকে। এরপর বিউটিকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান বাবুল। এ ঘটনায় ৪ মার্চ বিউটির বাবা দিনমজুর সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তাঁর মা ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কলমচানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর প্রতিবেশী ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পর বিউটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতে। গত ১৬ মার্চ রাতে ওই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন গত ১৭ মার্চ গুণিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে বিউটির লাশ পাওয়া যায়।
১৮ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল মিয়া ও তাঁর মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে গত ২১ মার্চ পুলিশ বাবুলের মা কলম চান ও সন্দেহভাজন হিসেবে বাবুলের বন্ধু একই গ্রামের ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। ৩১ মার্চ সিলেট থেকে বাবুলকে আটক করে র্যাব। অন্যদিকে পুলিশ আটক করে বিউটি বাবা সায়েদ আলী ও ময়না মিয়াকে। ৬ এপ্রিল হবিগঞ্জের আদালতে বাবুল, সায়েদ আলী ও ময়না মিয়া পৃথক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে বাবুল বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে সায়েদ আলী ও ময়না মিয়া ভাড়াটে খুনি কামাল মিয়াকে দিয়ে বিউটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
গত ২৪ এপ্রিল বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলায় বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। ছবি : এনটিভি
কেন নিজের মেয়েকে হত্যা?
হত্যার রহস্য উন্মোচনের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা গত ৭ এপ্রিল নিজ সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।
পুলিশ সুপার জানান, গত ইউপি নির্বাচনে বাবুল মিয়ার মা কলম চান সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রার্থী হন। তিনি ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এ নিয়ে বাবুল মিয়া ও ময়না মিয়ার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এদিকে, বিউটি আক্তার ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বাবুল মিয়া ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের সুযোগ নেন ময়না মিয়া। ময়না মিয়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বুঝান, তোমার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে কলঙ্কিনী হয়ে গেছে। এই মেয়ে রেখে লাভ কি। তোমার মেয়েকে খুন করে ধর্ষক বাবুলের ওপর খুনের দায় চাপিয়ে দিলে তার উপযুক্ত শাস্তি হবে। ময়না মিয়ার কথায় সায় দেন সায়েদ আলী। কথা মতো ১৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে সায়েদ আলী লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে গিয়ে বিউটি আক্তারকে তার নানা বাড়ি থেকে এনে তুলে দেন ময়না মিয়ার হাতে। রাত ৩টার দিকে ময়না মিয়া ও ভাড়াটে খুনি কামাল মিয়া মিলে বিউটি আক্তারকে শায়েস্তাগঞ্জের হাওরে এনে খুন করেন। খুনের সময় কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা সায়েদ আলী।