এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে টাকা, অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
ফারমার্স ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ঘটনায় অনিয়মের প্রমান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার দুদক ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুটি ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে অনেকেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছি।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করে আমেরিকায় যাবেন তাহলে যাবেন। এটা তাঁর ব্যাপার। তবে আইনের কোনো বাধা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে ২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের বাড়ি ক্রয়, অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
গত ১ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে দুই সদস্যের দলকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের পরপরই দুই সদস্যের দল গঠন করা হয়।
জানা যায়, অনুসন্ধানে গত ৬ মে ও ২৬ সেপ্টেম্বর আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএম শামীমসহ ছয় কর্মকর্তাকে সাড়ে ছয় ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
এর আগে গত ৬ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে আসা দুই আইনজীবী আফাজ মাহমুদ রুবেল ও নাজমুল আলম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এস কে সিনহাকে তাঁর বাড়ি বিক্রির চার কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, ‘এস কে সিনহার উত্তরার ছয়তলা বাড়িটি পাঁচ কাঠা জমির ওপর ছিল। এ বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্তি রায় ছয় কোটি টাকায় কেনেন। এ সময় বায়না দলিলকালে তিনি দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেছিলেন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নিরঞ্জন ও শাহজাহানের সহযোগিতা নেন। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্তি রায়ের স্বামী রণজিতের চাচা শ্বশুর। আর শাহজাহান রণজিতের বন্ধু।’ তাঁরা বলেন, ‘বাড়ি কিনতে বাকি চার কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান (দুই কোটি টাকা করে) ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শান্তি রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশেপাশের বেশকিছু জমি বন্ধক রাখেন শান্তি।’
তাঁদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পরে ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্তি রায়কে বুঝিয়ে দেন।
দুদক সূত্র আরো জানা যায়, ২০১৬ সালে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট যে চার কোটি টাকা শাহজাহান ও নিরঞ্জন ঋণ নেন তা একই বছরের ১৬ নভেম্বর পে-অর্ডারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। ওই বিষয়ে সম্প্রতি দুদকে আসা এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তা যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।