পিটিয়ে ক্ষত জায়গায় ছ্যাঁকা দেওয়া হতো
প্রিয়াংকা আক্তারের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। সারা শরীরে মোমবাতির ছ্যাঁকা। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ক্ষত জায়গায় ছ্যাঁকা দেওয়া হতো।
ফেনীর সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় প্রিয়াংকাকে। শিশুটি বর্তমানে ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিশুটিকে এভাবে নির্যাতনের অভিযোগে আটক করা হয়েছে শাহানা আক্তার নামের এক নারীকে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফেনী সদর উপজেলার কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে পুলিশ।
জানা যায়, শাহানা আক্তার এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রের পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতেন। শাহানার নিজের কোনো ছেলেমেয়ে নেই। সিলেটের সুফিয়া বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে আদালতের মাধ্যমে প্রিয়াংকাকে দত্তক নেন শাহানা। তখন প্রিয়াংকার বয়স ছিল এক বছর। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় থাকতেন তাঁরা। ১৫ দিন আগে তিনি প্রিয়াংকাকে নিয়ে শর্শদি ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামে নিজ বাড়িতে যান।
শাহানার প্রতিবেশী জোহরা আক্তার জানান, তাঁর স্বামী বাজার থেকে শোনেন যে, একটি মেয়েকে পুড়িয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরে তাঁরা ওই বাড়িতে কান্নার শব্দ শুনতে পান। এরপর তাঁর স্বামী তাঁকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখে আসতে বলেন। পরে জোহরা আক্তার গিয়ে প্রিয়াংকাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
এদিকে আটকের পর শাহানা আক্তার পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, গত কিছুদিন ধরে প্রিয়াংকা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। পরে গ্রামে নিয়ে আসলে অমৃত কুমার কবিরাজ তাঁকে বলেন যে, প্রিয়াংকার ওপর জ্বিনের আছর হয়েছে। মোমবাতির আগুন দিয়ে ওর গায়ে ছ্যাঁকা দিলে জ্বিন চলে যাবে। পরে তিনি ওই কাজ করেন।
গুরুতর আহত শিশুটি জানায়, সোমবার রাতে শাহানা তাকে লাঠি দিয়ে পেটান। পরে মোমবাতির আগুন দিয়ে সারা শরীরে ছ্যাঁকা দেন। পরে তাকে আটকে রেখে বেরিয়ে যান। গত কয়েকদিনে আরো কয়েকবার তাকে একইভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানায় শিশুটি।
স্থানীয়রা জানায়, শাহানা ঢাকায় থাকলেও গ্রামে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পালক মেয়ে হিসেবে আনলেও প্রিয়াংকাকে দিয়ে তিনি ঘরের সব ধরনের কাজ করাতেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাজমুল হাসান বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও ঝলসে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে।’ ওর কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেও তিনি জানান। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিতেও তিনি পরামর্শ দেন।
পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, শিশুটি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।