পলাতক জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। তাঁকে চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং একটিতে ২০ বছর কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। তাঁর সাজা ফাঁসির যোগ্য হলেও বয়স বিবেচনায় কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আবদুল জব্বার পলাতক থাকা অবস্থাতেই এ রায় ঘোষণা করলেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে বেলা ১১টা ৮ মিনিটে মামলার ১৪১ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া শুরু হয়। ১৪১ পৃষ্ঠার মূল রায়ের সারসংক্ষেপের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি আনোয়ারুল হক, দ্বিতীয় অংশ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সর্বশেষ মূল রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। রায়ে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু এবং ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ার রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামীপক্ষের আইনজীবীর দাবি করেন, আব্দুল জব্বার মামলায় উপস্থিত থাকলে খালাস পেতেন। আসামি এখনো আত্মসমর্পন করে আপিল করলে ন্যায়বিচার পাবেন বলে মনে করেন তিনি।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৪ জন সাক্ষী হাজির করে। তবে আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। গত বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
যত অভিযোগ
২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, লুটপাটসহ পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ২০০ জনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা, ৫৫৭টি লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলবাড়ীতে দুই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন আবদুল জব্বার। এ ছাড়া নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার শতাধিক বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ : ফুলবাড়ীতে একজনকে হত্যা ও ৩৬০টি বাড়িতে লুট-অগ্নিসংযোগ।
তৃতীয় অভিযোগ : নলি এলাকায় ১১ জনকে হত্যা ও ৬০টি বাড়িতে লুট করে অগ্নিসংযোগ।
চতুর্থ অভিযোগ : প্রায় ২০০ হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা।
পঞ্চম অভিযোগ : আঙুল কাটা ও মঠবাড়িয়া থেকে ৩৭ জনকে আটক, লুট, নির্যাতন এবং ২২ জনকে হত্যা।
১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিনোদবিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস বাদী হয়ে জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে দুই শতাধিক রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মামলার সব নথি গায়েব হয়ে যায়।
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের আমলে এমপিএ নির্বাচিত হন। ‘৭০-এর নির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা আসনে নির্বাচন করেন। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
১৯৭৫ সালের পর আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন জব্বার। পরে ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ভোটারহীন নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হন আবদুল জব্বার।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। এর পর কিছুদিন বিএনপির রাজনীতি করলেও ২০০১ সালে জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসেন তিনি। পরে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, বর্তমানে আবদুল জব্বার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন। সেখানে বড় মেয়ের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি।