জাহালমের বাড়িতে মানুষের ঢল, বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি
টিনের ঘর। সামনে ছোট উঠান। সেখানে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা। কেউ বসা, কেউ দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষই বেশি। মানুষের ভিড় কেবল উঠানে না, বাড়ি যাওয়ার পথেও। জাহালমকে দেখতে আসছে মানুষ!
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামের আজ সোমবার সকাল থেকেই এ দৃশ্য দেখা যায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা ভুল আসামি টাঙ্গাইলের জাহালম মুক্তি পেয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশের পর রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হলে তাঁর ভাই শাহনুরকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই গ্রামের বাড়ি ধুবুরিয়ায় পৌঁছান জাহালম।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জাহালমের বাড়িতে আজ সোমবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। গ্রামের লোকজন ছাড়াও আশপাশের এলাকার মানুষ ভিড় জমায় জাহালমকে একনজর দেখতে।
সকালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া গ্রামে জাহালমের বাড়িতে আনন্দের পাশাপাশি অন্যরকম এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা সন্তান ছাড়াও স্বজনরা জাহালমকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে।
দুদকের ভুলের কঠোর বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন স্বজনরা। জাহালমের ভাই শাহানুর বলেন, ‘আমরা এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।’
ধুবুরিয়া গ্রামের বাবুল সরকার জানান, জাহালম খুবই সরল প্রকৃতির মানুষ। এই পরিবারটি খুবই নিরীহ। জাহালমের মা এক সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছে।
অপর এক ব্যাক্তি বলেন, ‘আমরা জানি সমাজে যারা অন্যায় করে যারা দুর্নীতি করে দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু তাদেরকেই বিচারের আওতায় আনে। কিন্ত আজ দেখা গেল জাহালম নামের ব্যক্তিটি কোন অপরাধ না করেই তিন বছর জেল খাটলো। তাহলে দুদকের উপর আমাদের কতটা আস্থা ও ভরসা থাকতে পারে?’
জাহালম এনটিভিকে বলেন, ‘দুদক যেন সঠিক তদন্ত করে সঠিক অপরাধীকে ধরে। মিথ্যা মামলায় আমার মতো কাউকে যেন জেল খাটতে না হয়।’
এ সময় নিজের এই অবস্থার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুদকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন জাহালম।
গতরাতে মুক্তির পর জাহালম তাঁর ভাই শাহানুর মিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারাগার থেকে ভাই শাহানুরের সঙ্গে ভোররাত চারটায় গ্রামের বাড়িতে যান জাহালম। মা মনোয়ারা বেগম জাহালমকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। রাতে জাহালমকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলা হয়।
সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোতে ‘৩৩ মামলায় ভুল আসামি জেলে’ ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপনের পর স্বত:প্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে।