শহীদ দিবসে বিএমএর সভায় চিকিৎসকদের মারামারি
একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) হবিগঞ্জ জেলা শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় চিকিৎসকদের একটি অংশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের সভাকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
বিএমএ হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ মুজিবুর রহমান পলাশের নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী।
এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ নার্স ও চিকিৎসকরা দলবদ্ধভাবে থানায় গিয়ে ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রবেশ করছে সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফবৃন্দ। ছবি : এনটিভি
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএমএ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যরা সদর আধুনিক হাসপাতালে সভায় মিলিত হন। বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএমএ ও স্বাচিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের নার্সসহ স্টাফরা অংশ নেন।
সভা চলাকালে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ও শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মুজিবুর রহমান পলাশের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক সভাকক্ষে এসে বিক্ষোভ করেন।
ডা. পলাশ ক্ষুব্ধ হয়ে ডা. মুশফিক চৌধুরীর কাছে জানতে চান, তাঁকে না জানিয়ে কেন সভা আহ্বান করা হলো? এ সময় ডা. পলাশ সভায় উপস্থিত সবাইকে সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর একপর্যায়ে উভয়পক্ষের চিকিৎসক ও স্টাফদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
আহত অবস্থায় আব্দুল হামিদ (৪৬), ফরিদ মিয়া (৩০), শাহজাহান মিয়া (৩০), সালমা বেগম (৪৬), মণীষা (২০) ও শেখ জাহিরকে (৫৫) হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি
এ ব্যাপারে জেলা বিএমএ ও স্বাচিপের সভাপতি ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী জানান, তিনি নিজে দেখতে পেয়েছেন ডা. পলাশ কয়েকজন চিকিৎসককে কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করেছেন। ডা. পলাশের সঙ্গে থাকা লোকজন সভায় উপস্থিত ডাক্তার ও নার্সদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
ডা. মুশফিক আরো জানান, ডা. পলাশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সব চিকিৎসক-কর্মচারীরা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সভা চলাকালে তিনি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপারে সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাইফুর রহমান তারেক জানান, ডা. পলাশের নেতৃত্বে আসা কয়েকজন চিকিৎসক ও বহিরাগতদের হামলায় ডাক্তার ও নার্সসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সসহ স্টাফরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা ডা. পলাশ ও তার সহযোগীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের সভাকক্ষে ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী সভাপতিত্বে চিকিৎসক নার্স ও স্টাফদের সভা। ছবি : এনটিভি
ঘটনার পর অভিযুক্ত ডা. মুজিবুর রহমান পলাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। সেখানে পুলিশ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, বিএমএ সভাপতিসহ নেতারা থানায় এসেছিলেন। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিবেন। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএমএ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈয়দ মুজিবুর রহমান পলাশ জানান, তাঁর সঙ্গে পরামর্শ না করে সভাপতি অন্যায়ভাবে সভা আহ্বান করেছেন। এর আগেও সভাপতি একইভাবে সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে সভা করেছেন। এজন্য রাতে সভা চলাকালে সভাস্থলে গিয়ে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে কেন সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে সভায় উপস্থিত ডাক্তার ও স্টাফরা ডা. পলাশসহ তাঁর সঙ্গে যাওয়া ডাক্তারদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
ডা. পলাশ দাবি করেন, সভায় উপস্থিত ডাক্তার ও স্টাফদের হামলায় ডা. আসাদ পাঠান ও ডা. সোহাগসহ তাঁর তিন সঙ্গী আহত হয়েছেন। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।